প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশে কোন অবস্থাতেই যাতে খাদ্যের মজুত কমে না যায়, সে বিষয়ে সচিবদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি আজ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে সচিব সভার সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রয়েছে। খাদ্যের মজুত যাতে কমে না যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ ও টিসিবিসহ খাদ্যবন্ধব কর্মসূচী যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারী কর্মচারীদের আর আলাদা করে সম্পদের হিসাব সরকারকে দিতে হবে না। প্রতিবছর রিটার্ন দাখিলের সময় যে এক পৃষ্ঠায় সম্পদের বিবরণী দিতে হয়, সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করলেই হবে। তিনি বলেন, ‘এনবিআর, আমি এবং জনপ্রশাসন সচিব বসে ছিলাম। বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিয়েছি যে, সম্পদের হিসাব আর আলাদা করে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতি বছর আমরা যে রিটার্ন দেই, সেখানে একটি পৃষ্ঠার মধ্যে সম্পত্তির হিসাব দিতে হয়, ওই পৃষ্ঠাটা জনপ্রশাসনকে দিয়ে দেব।’ এ বিষয়ে এনবিআর অনাপত্তি দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এনবিআর বলেছে আমাদের কোন আপত্তি নেই। এখন সার্কুলার হয়ে যাবে। আমরা ওই পৃষ্ঠাই অনলাইনে জনপ্রশাসনকে দিয়ে দেব।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা যেন কোনভাবেই কারো কোন শেল্টার(আশ্রয়) বা সহায়তা কিংবা কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখার জন্য সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে জঙ্গির বিষয়ে একটু বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে আপনারা দেখেছেন, পুলিশ কিছু জঙ্গীকে( আনসাররুল্লাহ বাংলা টিম) ডিটেক্ট করেছে এবং তার মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি কিছু পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তাদের ট্র্যাক করে ধরা এবং জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া, তারা যেন কোনোভাবেই কারো কেনো শেল্টার বা সহায়তা বা কোনো আর্থিক বেনিফিট নিতে না পারে, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নানা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আইএমএফ জানিয়েছে, ২০২৩ সাল কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার হবে। এ সময় ডলারের দাম বেড়ে যাবে। করোনাভাইরাসের মহামারী শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তাই প্রকল্প ব্যয় যাতে রেশনাল হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জ্বালানী, সার, খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রের আমদানী কমাতে হবে। প্রসাধনী, আপেল, আঙ্গুর সহ বিলাস জাতীয় দ্রব্যের আমদানী বন্ধ করার মাধ্যমে ব্যয় কমাতে হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য ফিজিবিলিটি ও অ্যাসেসমেন্ট সঠিক ভাবে করতে হবে এবং বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশী সহায়তায় নেওয়া প্রকল্প সম্পর্কে সতর্ক থাকতেও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উন্নয়ন বাজেট কমানো হয় নি, রেভিনিউ বাজেটে সংকোচন করা হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সচিবদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাইভস্টক ও ফিসারিজের নতুন নতুন ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন জমিতে এগুলো যাতে উৎপাদন করা হয়, সে বিষয়েও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমদানী ব্যয় অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ১০টি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা ৩০-৩৫ বছর ধরে এ বিষয়ে কাজ করছে। এই খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে আয় ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।
রেমিটেন্স বাড়াতে প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও সচিবদের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা এবং ভূমির ই-রেজিস্ট্রেশন মিউটেশন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার বিষয়েও সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। সভায় ১৭ জন সচিব বক্তব্য রেখেছেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৮:২৩ ২৫৮ বার পঠিত