গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের বন্দীরা দক্ষশ্রম শক্তিতে পরিণত হবে। তদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অবারিত দ্বার উম্মোচিত হচ্ছে। কারগার থেকে বেরিয়ে তারা পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে আপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের বেকারী কার্যক্রমকে ঘিরে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিমধ্যেই গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে বেকারী কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, নানা উদ্যোগের ফলে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারটি এখন কারেকশন সেন্টারে পরিনণহয়েছে। এটি এখন বন্দীদের জন্য নিরাপদ জায়গা। আমরা বন্দীদের দক্ষশ্রম শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ কারণে জেলা কারগারে বেকারী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন ১০ জন বন্দী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এ বেকারীতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার বিস্কুট, কেক ও পাউরুটি তৈরি হবে। এগুলো আমরা বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়ে কারাগার ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করব। উৎপাদিত পণ্যের লাভের ৪০ ভাগ পাবেন কারবন্দী শ্রমিক। এতে কারাবন্দীর পরিবার একটি বড় আর্থিক সাপোর্ট পাবেন। এছাড়া কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারিভাবে এদের সহায়তা করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বন্দীরা বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন। এমন প্রত্যাশায় আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার আল আমিন মোল্লা বলেন, আমরা জেলা কারগারের বেকারীতে একটি অত্যাধুনিক ওভেন, প্লনেটারী মিক্সার মেশিন ও স্পাইরাল মিক্সার মেশিন দিয়েছি। এছাড়া এখানে দ্রুত একটি প্যাকেজিং মেশিন সংযোজন করা হচ্ছে। এখানে মানসম্পন্ন ও সুপারশপে বিক্রিযোগ্য বিস্কুট, কেক ও পাউরুটি উৎপাদিত হবে। বর্তমান সময়ে এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে প্রাথমিকভাবে ১০ জন বন্দী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে শ্রমিক বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া এসব পণ্য বিপণনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা অপরাধীর হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে চাই। তাই জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার দিক নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় আমরা জেলা কারগারে একটি অত্যাধুনিক বেকারী করে দিয়েছি। এটি বন্দীরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বন্দীরা কারগার থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব।
গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের জেলার মোঃ মোশফিকুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা গোপালগঞ্জে যোগদানের পর কারাগার পরিদর্শন করেন। তিনি কারাগারের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণকরেন। গত সাড়ে ৩ বছরে তার বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তায়িত হয়েছে। এ কারণে জেলা কারগার এখন বন্দীবান্ধব কারগারে পরিণত হয়েছে। এখানে বন্দীরা নিরাপদে আছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের সুপার মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন,জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কারগারে বেকারী কার্যক্রম শুরু করেছেন। এটি কারাবন্দীদের আয়বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। তারা অপরাধ প্রবনতা থেকে বেড়িয়ে এসে দক্ষকর্মীতে পরিণত হবেন।
গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের বন্দী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,এখানে সেলাই প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। এখন বেকারী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বেকারীতে কাজ করার জন্য আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখানে কাজ করে জীবন বদলে দিতে পারব। ভাগ্যের পরিবর্তণ ঘটাব। আসলে কাজ না থাকলে মাথার মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ঘুরপাক খায়। আর কাজ থাকলে মাথায় নতুন নতুন কিছু উদ্ভাবনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বেকারী আমাদের সেই উদ্ভাবনী সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব।
গোপালগঞ্জ জেলা কারগারের বন্দী মোজাম্মেল হক বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা কারগার এখন নিরাপদ। এখানে জেলার ও সুপার আমাদের প্রতিদিন আলোর পথ দেখান। তাই আমরা এখানে ভালো আছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৪:৩১ ২৪৭ বার পঠিত