ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রাইভেটকার চাপায় রুবিনা আক্তার (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় শাহাবাগ থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাতে নিহতের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি করেছেন।
মামলার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ।
এছাড়া শুক্রবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ।
তিনি বলেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। সাবেক শিক্ষক স্বাভাবিক ছিলেন কি না সেটা তদন্তের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে যাতে শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, এটি খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা। চালক সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব, কেন তিনি এমন করেছেন। চালকের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। আমরা এখনো চালকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। একটি নম্বর পেয়েছিলাম তার স্ত্রীর। কিন্তু কল দিলে রিং হয় ধরেন না, পরে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
নিহত নারীর বিষয়ে ডিসি বলেন, যে নারীর মৃত্যু হয়েছে সেটা নিয়ে আমাদের মামলার কাজ চলমান। ওই নারীর নাম রুবিনা আক্তার। তার মরদেহ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রয়েছে।
প্রাইভেটকারচালক মাদকাসক্ত ছিলেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানানোর পরে জানা যাবে উনি কোন অবস্থায় ছিলেন। এর আগে বলতে পারছি না।
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় রুবিনা আক্তারকে প্রাইভেটকার ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গাড়ির নিচেই আটকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলের যাত্রী এক নারীকে প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো ক ০৫-০০৫৫) ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে পড়ে গাড়ির নিচেই আটকে পড়েন নারী। পরে চালক গাড়ি না থামিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি দিয়ে নীলক্ষেত এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় উপস্থিত জনতা গাড়ির দিকে ইট-পাটকেল মারতে থাকলেও চালক গাড়ি থামাননি। পরে নীলক্ষেত মোড়ে গাড়ি আটকা পড়লে চালককে গণপিটুনি দেয় উপস্থিত জনতা। এতে গুরুতর আহত হন চালক। পরে ওই নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়।
নিউমার্কেট ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব আলম সাংবাদিকদের জানান, বিকেলে দেবর নুরুল আমিনের মোটরসাইকেলে করে তেজগাঁও থেকে হাজারীবাগের দিকে যাচ্ছিলেন ওই নারী। এ সময় শাহবাগ মোড়ে একটি প্রাইভেটকার পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় জনতা গাড়িটি জব্দ করে এবং রুবিনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বোনকে হারিয়ে হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুবিনার ভাই জাকির হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তেজকুনিপাড়ায় থাকতেন রুবিনা। তার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। রুবিনা তার দেবরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে হাজারীবাগে বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলটিকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে রুবিনা গাড়ির সামনে পড়ে যায়। এ সময় তার দেবর নুরুল আমিনও পাশে পড়ে যান। পরে গাড়িটি রুবিনাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৪:০০ ২২৩ বার পঠিত #মৃত্যু