মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধানক্ষেতের আইল ব্যবহার করে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এতে দিনে দিনে স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাটির খামার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় স্কুলের নামে ৩৩ শতক ও স্কুলের রাস্তার নামে অর্ধ শতক জমি দান করেন ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান সরকার ও তার পরিবার। ২০১৩ সালে স্কুল জাতীয়করণ হওয়ার আগেই তিনি অবসরে চলে যান। তিনি অবসরে যাওয়ার পর তার ভাই মো. নুর ইসলাম তার পুকুর সংলগ্ন স্কুলে যাতায়াতের জমি দখল করে নেন। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, স্কুলের জমিদাতা ছিলেন সহকারী শিক্ষক নুরুজ্জামান সরকার। তিনি থাকা অবস্থায় আমরা ওই অর্ধ শতক জমি দিয়ে যাতায়াত করতাম। কয়েক বছর আগে তার ভাই নুর ইসলাম রাস্তার ওই জমি দখল কলে স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে দাতার পরিবারের সদস্য আব্দুল গফুর তার বাড়ির আঙিনা সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু জুন মাসে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় আব্দুল গফুর সরকারকে সভাপতি না করায় তিনি তার জমি দিয়ে স্কুলে যাতায়াতে বাধা দিয়ে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ নভেম্বর গফুরের সমর্থক কিছু এলাকাবাসী তরুণ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য স্কুলের প্রজেক্টর চাইতে আসলে আমি সরকারি সম্পত্তি খেলাধুলায় দিতে অস্বীকৃতি জানাই। ফলে তিনি স্কুলের সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিমকে ডেকে নির্দেশ দেন, ‘কাল থেকে যেন কোনো শিক্ষার্থী ও শিক্ষক তার বাড়ির রাস্তা দিয়ে যাতায়াত না করে। এরপর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী জমির আইল দিয়ে, ধানক্ষেত দিয়ে যাতায়াত করছে।’
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী নুর ইসলাম, লিটন মিয়া, বাবু মিয়া ও মাইদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে স্কুলের সীমানায় এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে যেকোনো সময় মারামারিসহ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং প্রাণনাশের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমি গত ৩০ নভেম্বর নিরাপত্তা ও স্কুলের রাস্তা দখলদারমুক্ত করতে থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
এ বিষয়ে আব্দুল গফুর বলেন, স্কুল শুরুর সময় থেকে যাতায়াতের কোনো রাস্তা ছিল না। আমি বাড়ির উঠান দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বছরের পর বছর বাড়ির উঠান স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা হতে পারে না। তাই আমি নিষেধ করেছি। এর সঙ্গে প্রজেক্টর দেওয়া না দেওয়া বা স্কুলের কমিটিতে সভাপতি না করার কোনো সম্পর্ক নেই।
উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাদিরুজ্জামান বলেন, এর আগে আমি এক দিন সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন করেছি। স্কুলের জন্য পুকুরের পাশ দিয়ে রাস্তা ছিল কিন্তু সেখান দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করার বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে যাতে বাধা না দেয় সেটি স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করে দিয়েছি। এরপরও যদি কোনো হুমকি বা যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করে, তবে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা নেব। জমি দখলের বিষয়টি ইউএনও মহোদয় দেখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২১:৩১ ২৩৪ বার পঠিত