মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : কৃষি নির্ভর জেলা নীলফামারী। এই জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। উর্বর দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল আবাদ করে এ অঞ্চলের কৃষকেরা। তবে বর্তমানে নীলফামারীতে অপরিকল্পিতভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি।
জানা গেছে, সৈয়দপুরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীতে জায়গা না থাকায় বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে এসব কারখানা। এছাড়াও বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনে উত্তরাঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাবে- পেট্রোবাংলার এমন ঘোষণার পর দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা এ অঞ্চলে জমি কিনে গড়ে তুলছে শিল্পকারখানা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, কৃষিনির্ভর সম্ভাবনাময় জেলা নীলফামারীতে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ হেক্টর। এখানকার অধিকাংশ জমি তিন ফসলি। এছাড়াও রয়েছে ৫৫০ হেক্টরের চার ফসলি জমিও। বর্তমানে এসব কৃষিজমিতে কারখানা গড়ে উঠছে। জেলার সৈয়দপুরে শিল্পকারখানা ও আবাসন গড়ে ওঠায় গত পাঁচ বছরে ২০০হেক্টর আবাদি জমি কমেছে বলে কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানে জানা গেছে।
বিসিকের তথ্য মতে, নীলফামারীকে শিল্পকারখানায় সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে সৈয়দপুরে ১১ একর জমি নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। এটি প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মধ্যেই ৯২টি প্লটের সবগুলোতে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময় নতুন নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলেও সেখানে তারা কোনো জায়গায় পাননি। ফলে জেলার বিভিন্ন আবাদি ও অনাবাদি জমিতে তারা গড়ে তুলছেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর প্লট সম্প্রসারণ করা না হলেও জেলার শিল্প উন্নয়ন থেমে নেই। বিভিন্ন উপজেলায় অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে কারখানা গড়ে উঠছে। বিসিকে প্লট বরাদ্দ পেলে উদ্যোক্তারা অনেক সাশ্রয়ে কারখানা গড়ে তুলতে পারতেন। বাইরে অতিরিক্ত দামে জমি কিনে যাতায়াত ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে অনেক পুঁজি খোয়াতে হয়।
বিসিকের জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক হুসনে আরা খাতুন বলেন, সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর আশপাশে কোনো জায়গা না থাকায় তা সম্প্রসারণ করা সম্ভব নয়। তবে কৃষিজমির যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্য জেলা সদরে দ্রুত নতুন একটি নগরী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ইতোমধ্যে জায়গা মনোনীত করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, বগুড়া থেকে পাইপলাইনে নীলফামারীতে গ্যাস আসছে। তাই এখানে উদ্যোক্তাদের সমাগম বাড়ছে। ইতোমধ্যে আবাদি জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, যা উদ্বেগজনক। তবে শিল্পনগরী স্থাপিত হলে কৃষি জমিগুলো রক্ষা পাবে। সে লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের বাইরে জেলায় প্রায় তিন হাজারের বেশি শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৯:২৬ ২২৩ বার পঠিত