বিয়েই করেননি কিন্তু মামলা হয়েছে যৌতুকের। শুধু তাই নয়, এমন মামলায় তাকে যেতে হয়েছে কারাগারেও! এমনই অবাক কাণ্ড ঘটেছে রাজধানীর উত্তরার এক ভুক্তভোগীর জীবনে। পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হওয়ার পর মামলা খারিজ করেন আদালত। তবে সমস্যা হলো, শুধু একটি নয়, উত্তরার রাজাবাড়ী এলাকায় এমন ঘটনা আরও আছে।
আইনজীবীরা বলছেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সারা দেশে বছরে অন্তত শতাধিক এমন ‘গায়েবি স্ত্রী’ সাজিয়ে ভুয়া মামলার ঘটনা ঘটছে।
ঘটনার দিন গভীর রাতে হঠাৎ পুলিশের ডাকে ঘুম ভাঙে শাহজালালের পরিবারের। স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দিয়েছেন। সেই মামলায় গ্রেফতার করতেই পুলিশের অভিযান।
যদিও বাস্তবতা হলো, তখনও শাহজালাল বিয়ে করেননি। যে নারী মামলা করেছেন, তাকে চেনেন না তিনি। মামলার নথিতে বলা হয়, শাহজালাল ২০১২ সালে রোকসানা নামে একজনকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে দুই লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ার অভিযোগে নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলার ফাঁদে পড়েন তিনি।
শাহজালাল বলেন, ‘যৌতুক মামলা দিয়ে বাসা থেকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ধরে নিয়ে গেছে, আমি আসলে তখনই মারা গেছি।’
মামলায় যে কাজি অফিসে বিয়ে হয়েছে বলে বলা হয়েছে, সেটির কোনো অস্বিত্ব নেই। এজাহারে রোকসানার যে ফোন নম্বর উল্লেখ করা হয়, সেই নম্বরে ফোন করা হলে বলা হয় তিনি রোকসানা নন, চেনেন না শাহজালালকে। মামলাও করেননি।
নিজেকে মনি পরিচয় দিয়ে এই নারী বলেন, ‘আমি রোকসানাও না, রোকসানার কেউ না। আমি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একজন গৃহকর্মী।’
পরবর্তী সময়ে মামলাটি খারিজ করেন আদালত। কিন্তু দুদিন জেলের ঘানি টেনে মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয় বছরখানেক। গায়েবি এই মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে এই হয়রানির বিরুদ্ধে মামলা করেন শাহজালাল। তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা মো. আইয়ুব বলেন, ‘যে নারী মামলা করেছিলেন আমি তাকে পাইনি। থানার মাধ্যমে খুঁজেছি, থানা থেকেও বলেছে এই নামে সেখানে কেউ নেই।’
উত্তরার ওই একই এলাকায় এমন ঘটনা আরও আছে।
শাহজালালের পরিবার বলছে, সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্থানীয় একটি চক্র একের পর এক মামলা দিচ্ছে শাহজালালের নামে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, শাহজালালকে বিয়ে দেয়ার জন্য তার পরিবার জমি বিক্রি করে দিতে অনুরোধ করে নূর নবী নামে এক জমির দালালকে। সেই ঘটনার পর থেকে শুরু হয় গায়েবি সব মামলা।
নূর নবীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি আমার সঙ্গে দেখা করেন, সাক্ষাতে কথা হবে। আমি বাইরে আছি, দু-এক দিন পরে দেখা হবে।’
শাহজালালের বিরুদ্ধে গায়েবি স্ত্রীর যৌতুক মামলার বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু বলেন, এমন মামলা নতুন নয়। প্রতিবছর শতাধিক এমন মামলা হয় দেশের আদালতগুলোতে।
তিনি বলেন, ভুয়া কাবিননামা ও আইডি কার্ড ব্যবহার করে এ ধরনের মামলাগুলো করা হয়।
যেহেতু আদালতের পক্ষে মামলা করতে আসা ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই, তাই সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০০:৩৭ ২৫৮ বার পঠিত