গান গেয়ে আর সংসার চলছে না মোবারক বয়াতির

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » গান গেয়ে আর সংসার চলছে না মোবারক বয়াতির
শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২



---

মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : চায়ের দোকানের এক কোনায় বসে দোতারায় সুর তুলেছেন এক বৃদ্ধ। মুখে সাদা দাড়ি–গোঁফ, পরনে চেক শার্ট ও লুঙ্গি। একের পর এক গেয়ে যাচ্ছেন বাউল আর মুর্শিদি গান। ভাওয়াইয়া গাইলেন একফাঁকে। তাঁকে ঘিরে চায়ের দোকানে শ্রোতাদের ভিড়। গান শেষে অনেকে মুগ্ধ হয়ে গায়ককে ১০–২০ টাকা দিলেন।
গত মঙ্গলবার(২০ডিসেম্বর) রাত নয়টার দিকে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ট্রাফিক বক্স–সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে দেখা হলো মোবারক আলীর (৬৮) সঙ্গে। স্থানীয় লোকজনের কাছে তিনি ‘মোবারক বয়াতি’ নামে পরিচিত। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গান করেন এই শিল্পী। জেলার ছোট-বড় বিভিন্ন হাটবাজারে দোতারা নিয়ে ঘুরে গান গাওয়া মোবারক বয়াতির পেশা। ৩০ বছর ধরে এভাবেই চলছে তাঁর সংসার।
মোবারক আলীর বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কাজলদিঘী-কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের উদকুরা এলাকায়। সংসারে তাঁর দুই ছেলে আর চার মেয়ে। এর মধ্যে বড় ছেলে ও দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী, বড় ছেলের স্ত্রী, ছয় বছরের নাতনিসহ আটজনের সংসার।
স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে এক পীরের মুরিদ হয়েছিলেন মোবারক। ওই পীরের তরিকায় মারফতি, মুর্শিদিসহ বিভিন্ন গানের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোবারক দিনমজুরের কাজ করতেন। এর মধ্যে ১৯৯২ সালের পর তিনি নিজে দোতারা বাজিয়ে গান গাইতে শুরু করেন। দিনের বেলা দিনমজুরের কাজ করতেন আর রাতে বিভিন্ন হাটবাজারে ঘুরে গান গাইতেন। এতে বাড়তি কিছু আয় করতেন। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল সংসার।
মোবারক বলেন, ওই সময় বড় ছেলে শাহিনুর আলম সংসারের হাল ধরেন। তাই দিনমজুরের কাজ ছেড়ে তখন পুরোদমে গান গাইতে শুরু করেন। শাহিনুর নির্মাণশ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। তবে সাত মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায় শাহিনুরের। তখন থেকে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু শাহিনুর এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। শাহিনুরের চিকিৎসা করাতে গিয়ে একমাত্র সম্বল আধা বিঘা আবাদি জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন শুধু ভিটেবাড়ির ২০ শতক জমি ছাড়া আর কিছুই নেই।
অসুস্থতার কারণে শাহিনুর কাজ করতে পারেন না। তাই পুরো সংসারের দায়িত্ব মোবারকের কাঁধে। শরীর ভালো থাকলে দিনের বেলা অন্যের কৃষিজমিতে দৈনিক চুক্তিতে কাজ করেন। কাজ শেষে সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়েন দোতারা নিয়ে। প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে ২৫০–৩০০ টাকা আয় হয় তাঁর।
মোবারক বলেন, ‘প্রতিদিন তো সমান আয় হয় না। আবার দিনের বেলা সব সময় কাজ পাওয়া যায় না। দৈনিক যা আয় হয়, তা দিয়ে চাল আর অন্য জিনিসপত্র কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। অসুস্থ বড় ছেলের জন্য ওষুধও কিনতে হয়। দিন দিন জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়তেছে, অল্প এই আয় দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
আর্থিক টানাপোড়েনে বড় ছেলেকে অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়াতে পারেননি। পরের দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন এসএসসি পাস করেছেন। আরেকজন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। কষ্ট করে হলেও ছোট ছেলেমেয়েদের মোবারক পড়াশোনা করাচ্ছেন। ছোট দুই মেয়ের মধ্যে একজন দশম শ্রেণিতে, অন্যজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট ছেলে পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে।
মোবারক আলী বলেন, ‘একটা সময় শরীরে শক্তি ছিল। তখন দিনমজুরের কাজ করে ও গান গেয়ে ভালোই আয় হতো। এখন বয়স হইছে। বেশি কাজকাম করতে পারি না। মানুষ কাজেও নিতে চায় না। বড় ছেলে অসুস্থ। গান গাওয়াই এখন মূল কাজ। যা আয় হয়, তার ওপরই নির্ভর করতে হয়। ছেলেটা সুস্থ থাকলে কোনো চিন্তা ছিল না। গান গেয়ে জীবন কাটায় দিতাম। কিন্তু এখন ওর (ছেলে) চিকিৎসার খরচ আর স্ত্রী–সন্তানদের খরচ—সবই আমাকে চালাতে হয়। এ জন্য খুবই বিপদে আছি।’

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৯:০২   ২৩৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের সাথে এসপির মতবিনিময়
টিপুকে দেখতে হাসপাতালে গিয়াসউদ্দিন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি
৩১ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩, পিকআপ ভ্যান জব্দ
‘কেমন না.গঞ্জ চাই’ জানালো শিক্ষার্থীরা, বিএনপির বিরুদ্ধে আনলো নানা অভিযোগ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স উত্তোলন করা যাবে
আগামীর রাজনীতি হবে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতি: আমীর খসরু
৬ জুলাই ‘বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস’ প্রস্তাব জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত
বিশ্বকাপ বাছাই: রড্রিগোর একমাত্র গোলে জয়ে ফিরলো ব্রাজিল
নেশন্স লিগ: ফ্রান্সকে উড়িয়ে দিয়েছে ইতালি, ডি ব্রুইনার দুই গোলে বেলজিয়ামের জয়
ইংলিশের রেকর্ড সেঞ্চুরিতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো অস্ট্রেলিয়া

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ