বিশ্বকাপে দুঃস্মৃতি কাটিয়ে প্রিমিয়ার লিগে ফিরেই গোল পেয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক টটেনহ্যাম স্পার্শের হ্যারি কেন। বিশ্বকাপ বিরতি শেষে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগ। কাল ব্রেন্টফোর্ডের সাথে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২ ব্যবধানের স্বস্তিদায়ক ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে টটেনহ্যাম। ম্যাচে ৬৫ মিনিটে স্পার্সদের হয়ে প্রথম গোলটি করেন কেন। এরপর ৭১ মিনিটে সমতাসূচক গোলটি করেছেন পিয়েরে এমিলে হোবার্গ। এদিকে দিনের আরেক ম্যাচে লিস্টার সিটিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে নিউক্যাসল।
বিশ^কাপের কারনে নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম। কমিউনিটি স্টেডিয়ামে ৫৪ মিনিটের মধ্যে ভিটালি জানেল্ট ও ইভান টোনির গোলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে বিপদে পড়ে এন্টোনি কন্টের দল। ১৫ মিনিটে পোস্টের খুব কাছ থেকে গোল করে জানেল্ট ব্রেন্টফোর্ডকে এগিয়ে দেন। তার আগে মাথিয়াস জেনসের শট রুখে দিয়েছিলেন টটেনহ্যাম গোলরক্ষক ফ্রেসার ফর্স্টার। কিন্তু ফিরতি শটে জানেল্ট বল জালে জড়াতে ভুল করেননি। ৫৪ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান নোরগার্ডের ফ্লিক থেকে টোনি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। কিন্তু ৬৫ মিনিটে কেনের হেডে টটেনহ্যাম ম্যাচে ফিরে আসার সাহস খুঁজে পায়। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে পরাজয়ের ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি মিস করেছিলেন কেন। আর কেনের এই পেনাল্টি মিসে ইংল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিত হয়।
১৯৪৮ সালের পর থেকে টটেনহ্যামকে হারাতে পারেনি ব্রেন্টফোর্ড। ১৯ মিনিট বাকি থাকতে হোবার্গের কার্লিং শটে পূর্ব লন্ডনের দলটির বিপক্ষে জয়ের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা শেষ হয়ে যায় ব্রেন্টফোর্ডের।
বিশ^কাপের হতাশা শেষে দলের এক পয়েন্ট নিশ্চিতে অবদান রাখার জন্য ইংলিশ অধিনায়ক কেনের প্রশংসা করে টটেনহ্যাম বস কন্টে বলেছেন, ‘সে যখন ফিরে আসে তখন সবসময়ই ভাল খেলে। আমাদের জন্য হ্যারির গুরুত্ব যে কতটা সেটা আমরা সবাই জানি। তার ব্যক্তিত্ব, তার চরিত্র আমাদের কাছে বিশেষ কিছু। আমাদের দলের সেরা খেলোয়াড় কেন। আজ সে গোল করতে পারায় আমি দারুন খুশী। গত মৌসুমের পর থেকেই আমরা সবাই মিলে দারুন একটি সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাবার পালা। পথটা মোটেই সহজ নয়। আমাদের নিজেদের প্রতি ধাপে প্রমান করতে হবে।’
এই ড্রয়ে চতুর্থ স্থানেই থাকা টটেনহ্যাম পঞ্চম স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের থেকে চার পয়েন্ট এগিয়ে এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য নিজেদের জায়গা ধরে রেখেছে।
টটেনহ্যামের থেকে তিন পয়েন্ট এগিয়ে নিউক্যাসল অপ্রত্যাশিত ভাবে শীর্ষ চারে নিজেদের ধরে রাখার লড়াই এখনো টিকিয়ে রেখেছে। সৌদি মালিকানাধীন ক্লাবটি কোচ এডি হোয়ের অধীনে ম্যাগপাইরা নিজেদের নতুনভাবে প্রমান করে চলেছে। কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর তিন মিনিটের মধ্যে পেনাল্টি থেকে গোল করে এগিয়ে যায় নিউক্যাসল। ড্যানিয়েল আমারতির বিপক্ষে পেনাল্টি আদায় করেন জোয়েলিনটন। স্পট কিক থেকে সফরকারীদের এগিয়ে দেন ক্রিস উড। ৭ মিনিটে ব্রুনো গুইমারায়েসের সাথে বল আদান প্রদান করে গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডকে পরাস্ত করে মিগুয়েল আলমিরন ব্যবধান দ্বিগুন করেন। শেষ আট লিগ শ্যাচে এটি আলমিরনের অষ্টম গোল। ৩২ মিনিটে কর্ণার থেকে হেডের সাহায্যে নিউক্যাসলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন জোয়েলিনটন। এটি নিউক্যাসলের টানা ষষ্ঠ লিগ জয়। ২০১২ সালের পর লিগে যা তাদের সেরা সাফল্য।
রেলিগেশন খরায় থাকা উল্ফসের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে এভারটন। গুডিসন পার্কে একেবারে শেষ সেকেন্ডে সফরকারীদের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন রায়ান এইত-নৌরি। এর আগে ৭ মিনিটে ইয়েরি মিনার গোলে এগিয়ে গিয়েছির এভারটন। ডুয়াইট ম্যাকনিলের কর্নার থেকে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার মিনার হেডে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ২২ মিনিটে হুয়াও মুটিনহোর ক্রস থেকে ড্যানিয়েল পোডেন্সের ভলিতে সমতায় ফিরে উল্ফস। স্টপেজ টাইমে এইত-নৌরি কাউন্টার এ্যাটাক থেকে পোস্টের খুব কাছে থেকে বল জালে জড়ালে দারুন এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে উল্ফস। তলানির থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা উল্ফস এখন এভারটনের থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। এভারটনের কোচ ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ড এখনো প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন।
ব্রাইটনের কাছে ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে পরাজিত করে তলানিতে নেমে গেছে সাউদাম্পটন। ১৪ মিনিটে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে ব্রাইটনকে এগিয়ে দেন এ্যাডাম লালানা। রোমেইন পেরডের আত্মঘাতি গোলে বিরতির ১০ মিনিট আগে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ৫৬ মিনিটে সোল মার্শের দুর পাল্লার শটে আরো এগিয়ে যায় ব্রাইটন। ৭৩ মিনিটে জেমস ওয়ার্ড-প্রাউসের স্পট কিক রুখে দেন ব্রাইটনের গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজ। কিন্তু ফিরতি বলটি ঠিকই জালে জড়ান ওয়ার্ড-প্রাউস। কিন্তু এই গোলের পরও নাথান জোনসের অধীনে ঘরের মাঠে লিগে প্রথম পরাজয় এড়ানো সম্ভব হয়নি সাউদাম্পটনরে।
নয়জনের ক্রিস্টাল প্যালেসকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে ফুলহ্যাম। ফুলহ্যামের হয়ে গোল করেছেন ববি ডি কোরডোভা-রেইড, টিম রিয়াম ও আলেক্সান্দার মিট্রোভিচ। ৩৪ মিনিটে সরাসির লাল কার্ড দেখে মাঠত্যাগ করেন টাইরিক মিচেল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের জন্য জেমস টমকিন্সও মাঠত্যাগে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৫:১৩ ১৮২ বার পঠিত