চলতি বছরের মতো এমন টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি কয়েক দশকেও হয়নি বিশ্ব। বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশগুলো মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, জিডিপি ও পুঁজিবাজার সামলাতে গিয়ে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে।
চলতি বছর ইউরোপের ধনী দেশগুলোর মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে দুই অঙ্কের ঘরে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হারিয়েছে ১৫ শতাংশ। জ্বালানি সংকটে তেল-গ্যাসের দাম হয়েছে আকাশছোঁয়া।
সম্প্রতি ইকনোমিকস তাদের এক জরিপে চলতি বছরে এত সমস্যার মধ্যেও যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। মূলত জিডিপি, মূল্যস্ফীতির হার, অভ্যন্তরীণ দেনা ও পুঁজিবাজারের হালচালের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকাটি প্রস্তুত করেছে বার্তা সংস্থা ইকনোমিকস।
ইকনোমিকসের তালিকায় সবার ওপরে আছে গ্রিসের নাম। এরপর রয়েছে স্পেন, পর্তুগাল ও ইসরাইলের মতো দেশ।
যেখানে পূর্বে রাজনৈতিক স্থিরতাকেই সুস্থ অর্থনীতির অবকাঠামো হিসেবে ধরা হতো, সেখানে নতুন এ তালিকায় দেখা যায় রাজনৈতিকভাবে স্থির থেকেও জার্মানি চলতি বছর অর্থনীতির মাপকাঠিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। অন্যদিকে ইসরাইল রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো করেছে। এছাড়া বাল্টিক অঞ্চলের দেশ ইস্তোনিয়া ও লাটভিয়াও ২০১০ সালের পর এ প্রথম অর্থনীতিতে বড় রকমের একটি ধাক্কা খেয়েছে।
জিডিপির হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নরওয়ে ও তুরস্ক। মূলত জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যে বিশ্ব যখন দিশেহারা, তখন সেই জ্বালানি তেল থেকেই লাভ তুলেছে নরওয়ে। অন্যদিকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় লাভটা হয়েছে তুরস্কের। চলতি বছর রাশিয়ার সঙ্গে চুটিয়ে ব্যবসা করেছে দেশটি।
মূল্যস্ফীতির হিসেবে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড। বিশ্ব যেখানে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির হার সামাল দিতে ব্যতিব্যস্ত, সেখানে চলতি বছর সুইজারল্যান্ডের মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। মূলত ইউরোপের দেশগুলো রুশ জ্বালানি নিয়ে চলতি বছর মারাত্মক রকমের ভোগান্তির শিকার হয়েছে। তবে সুইজারল্যান্ডের জ্বালানিখাত রুশ নির্ভর ছিল না। দেশটির তেলের জোগান আসতো স্পেন থেকে ও গ্যাস সরবরাহ এসেছে আলজেরিয়া থেকে।
চলতি বছর লাটভিয়ার মূল্যস্ফীতির হার ছিল ২০ শতাংশ - যা এ বছরে ইউরোপে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ইতালির মূল্যস্ফীতিও ১১ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা শঙ্কাজনক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি কদিন আগে ৪২ বছরের রেকর্ড ভাঙলেও বর্তমানে দেশটি শঙ্কামুক্ত। এছাড়া জাপানের মূল্যস্ফীতিও কদিনের মধ্যেই শঙ্কামুক্ত অবস্থায় নেমে আসবে এমনটাই বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
পুঁজিবাজারের দিক দিয়ে চলতি বছর সবচেয়ে খারাপ সময় কাটিয়েছে জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়া। দেশ দুটিতে শেয়ারের দাম কমেছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনের পুঁজিবাজারের অবস্থায়ও চলতি বছরে যাচ্ছেতাই। তবে নরওয়ে ও ব্রিটেন কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় আছে পুঁজিবাজারে - এমনটাই বলছে ইকনোমিকস।
২০২২ কোনোভাবে কেটে গেলেও কেমন যাবে ২০২৩ - এমনটাই প্রশ্ন প্রতিটি দেশে দেশে। এ অবস্থায় পশ্চিমা অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২৩ কেমন যাবে তা নির্ভর করে পুতিনের সঙ্গে আগামী বছর পশ্চিমাদের সম্পর্কের ওপর। মূলত জ্বালানি সমস্যা কাটানো গেলেই ২০২৩ সালের অর্থনীতি নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত থাকা যায় - এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৫:২৭ ২২৮ বার পঠিত