রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল৷ পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি৷ সংবিধান অনুযায়ী, তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই৷
এক্ষেত্রে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে। আর নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাচ্ছে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘প্রেসিডেন্ট-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
এ ব্যাপারে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ার দুমাস আগে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একমাসের মধ্যেই তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনের অন্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সময় গণনা শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে।
এদিকে চলতি অধিবেশনেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনি কর্তা হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনি কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষার পরে একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকলে নির্বাচন কমিশন ওই ব্যক্তিকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করবেন। তবে একাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাদের নাম ঘোষণা করবেন।
সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনি কর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি :
সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে৷ তারাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷ রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে৷ তবে যে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে, ওই সংসদের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না৷ আর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷
রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না৷ তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক লাগে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন৷
সংবিধানের ৪৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-
(ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা
(খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হন; অথবা
(গ) কখনও সংবিধানের অধীন অভিশংসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ হতে অপসারিত হয়ে থাকেন৷
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০০:০৮ ১৮৮ বার পঠিত