সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল। টানেল নির্মাণের কাজ প্রায় ৯৫.৫০ শতাংশ শেষ। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে সাংহাই শহরের মতোই চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণের স্পন্দন। দেশের জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির স্বার্থে চট্টগ্রাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশাবাদী চট্টগ্রাম আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে। আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি টানেলটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ২টি অংশ। এর একটি অংশ স্বাধীনতা আর একটি অর্থনৈতিক মুক্তি। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বড় স্থাপনা পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে যখন বিশ^ব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তখন পদ্মাসেতুর স্বপ্ন ছিলো হতাশায় ঘেরা। ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। সে পদ্মাসেতু আজ স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ আর অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা। আইএমএফ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এর ফলে বিশে^র এক তৃতীয়াংশ দেশ এখন মহামন্দার দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। ইউরোপের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় গত ৪০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কার রিজার্র্ভ তলানিতে, পাকিস্তানের রিজার্ভও সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। আমাদের দেশেও জ¦ালানী তেলসহ সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বিশ^ পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বাংলাদেশের রিজার্ভের অবস্থান এখনো ভালো আছে।
এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশের রিজার্ভ এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এখনো দেশে ৫ মাস আমদানি করার মত রিজার্ভ আছে। দেশের অর্থনীতির চলমান ধারার মধ্যে একটি বলিষ্ঠ আভাস আছে। আগামীতে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এবং জিডিপি আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘বন্দরনগরীতে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। ঢাকায় মেট্রোরেল কতটুকু আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সেটা আপনারা দেখেছেন। চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হচ্ছে, ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রায় শেষ। ৩১ জানুয়ারী আমি আসব, মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি শেষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব সেদিন। এখানকার নেতারা থাকবেন, সরকারের তথ্যমন্ত্রীও থাকবেন।’
সেতু মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এরিয়ার জন্য ট্রান্সপোর্ট মাস্টার প্ল্যানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন’ এরিয়া শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেকে)। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা থেকে ৫৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট হ্রাস ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব মেট্রোসিস্টেম চালু করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিটিসিএ, সিডিএ, সিসিসি ও সিএএ’র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০১:৩৬ ২৪৮ বার পঠিত