দেশের ৩ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংককে বিভিন্ন ফি এবং মূল্যসংযোজন কর পরিশোধে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারের টাকা মানে সাধারণ মানুষের টাকা। সে টাকা অবশ্যই অপারেটরদের দিতে হবে। বিটিআরসি জনগণের অর্থ আদায়ে বদ্ধপরিকর। বিটিআরসি যত আইন-কানুন ও পলিসি প্রণয়ন করেছে, তা দেশের জনসাধারণের কল্যাণের জন্যই।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি এ দেশে টেলিযোগাযোগ খাতকে একটি সময়োপযোগী খাত হিসেবে তুলে ধরতে চায়। সেবার মানোন্নয়নে মনিটরিংয়ের পাশপাশি রাজস্ব আদায় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। তিনি বলেন, মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির পাওনা বাবদ প্রকৃত টাকা না দিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আকারে অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন- ১০০ টাকা মূল টাকা হলে বিটিআরসিকে দিয়েছিল ৮৫ টাকা অর্থাৎ বাকি ১৫ টাকা ভ্যাট হিসেবে প্রদর্শন করেছিল) দিয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্য আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না মানলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিটিআরসি।
স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব এবং জনগণের অর্থ। অপারেটরদের এই অর্থ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।
অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব বিভাগের কমিশনার ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী বলেন, বিটিআরসি সরকারের কোষাগারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়ে আসছে। রাজস্ব যাতে সঠিকভাবে আদায় করা যায়, সে জন্য রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার বাস্তবায়নের পাশাপাশি রেভিনিউ পলিসি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, অপারেটরদের বিনিয়োগ এবং কস্ট ম্যানেজমেন্টের বিষয়গুলো তাদের নিজস্ব বিষয়। অপারেটরদের লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচ্য বিষয় না এবং বিটিআরসির প্রাপ্য তাদের পরিশোধ করতে হবে।
লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক জনাব আশীষ কুমার কুন্ডু জানান, গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসিকে প্রদেয় পাওনার পরিমাণ ১১৬৩.৮৫ কোটি টাকা, বাংলালিংকের কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৬২৫.২৭ কোটি টাকা, রবির কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ ৫৬৫.৫৮ কোটি টাকা, এয়ারটেলের কাছ থেকে বিটিআরসিকে প্রদেয় অর্থের পরিামণ ৫৯.০৫ কোটি টাকা।
তিনি আরও জানান, বিটিআরসি অপারেটরগুলো থেকে শতভাগ টাকা পাবে, এক্ষেত্রে এর মধ্যে ১৫ ভাগ ভ্যাট যুক্ত করা যাবে না।
বিটিআরসির আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা- ই-রাকিব বলেন, অপারেটরদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে কোনো অর্থ দাবি করা হয়নি এবং বিটিআরসি তার প্রাপ্য অর্থ পাবে।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক তারেক হাসান সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েলসহ সংস্থাটির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫১:৫৮ ১৯৩ বার পঠিত