প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে সারাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির একটি প্রামাণ্য দলিল জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন।
আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা একথা বলেন।
গত ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার অষ্টম দিনে আজ অংশ নেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সরকারি দলের সদস্য এনামুল হক, মো. আব্দুল মজিদ খান, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, একেএম ফজলুল হক, মো. মোজাফফর হোসেন, বেগম কানিজ ফাতেমা আহমেদ, বেগম নাদিরা ইসলাম জলি, বেগম অপরাজিতা হক, জাতীয় পার্টির সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও বেগম সালমা ইসলাম।
তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পরিবহন সেক্টরে কক্সবাজার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত রেললাইন যুক্ত হয়ে গেছে। পঞ্চগড় থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরের সাথে আকাশপথ যুক্ত হয়ে গেছে। একই সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়েও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, মেরিটাইম সেক্টর বিশাল সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমুদ্রে এখন বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ মর্যাদা নিয়ে চলাচল করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের সময় বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ মাত্র ৩০টি ছিল, এখন ৯৫টি জাহাজ বাংলাদেশের মেরিটাউম সেক্টরে বিচরণ করছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমরা ১০০টি জাহাজ সেলিব্রেট করতে যাচ্ছি। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরী করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে নৌপথ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন ১৬টি দপ্তর ও সংস্থার গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে যে চারটি নদী রয়েছে, সেইসব নদীগুলোকে চলাচলের জন্য দখল ও দুষণমুক্ত করা হয়েছে। নদী তীরের ২২ হাজার ৫৩৯টি অবৈধ স্থাপনা ইতোমধ্যে উচ্ছদ করা হয়েছে এবং ৮৪১ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন নদী তীরের পরিবেশ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষা নদীর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এমনিভাবে দেশের সকল নদ-নদী রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিএনপি জামাতের সময় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শিপিং কর্পোরেশন জেগে উঠেছে। গত দুই অর্থবছরে শিপিং কর্পোরেশন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। এই বন্দর ইতোমধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আয় করেছে।
সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, সরকারের এতো উন্নয়নের পরও বলা হচ্ছে দেশে নাকি কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। করোনা মহামারির মধ্যেও অনেকে বলেছিল বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের একটি মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি, বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ। যারা এসব কথা বলে তাদের দুঃশাসন দেশের মানুষ দেখেছে। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমরা খুনি জিয়াউর রহমানের দুঃশাসন দেখেছি। ওই দুঃশাসনের সময় তিনি খুনিদের নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়াও একই পথে চলেছেন।
তারা বলেন, আজকে যখন বাংলাদেশ বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তখন দেশকে টেনে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশে তারা হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি কায়েম করেছিল। সমগ্র বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। তারাই এখন দেশে মানবাধিকারের কথা বলছে। আইনের শাসনের কথা বলছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ দন্ডিত হয়ে কারাবরণ করছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা আশা করি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশ একটি স্মার্ট এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৪৩ ২০১ বার পঠিত