ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আবারো বইছে নিন্দার ঝড়। গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের শুভ উদ্বোধন করেন।
এ উদ্বোধনী ৫০টি মডেল মসজিদের মধ্যে জামালপুর জেলায় পাঁচটি উপজেলায় ৫টি মডেল মসজিদের শুভ উদ্বোধন করা হয় এবং এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, সরকারি বেসরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক ,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ,স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ ইলেকট্রনিক ও প্রিমিডিয়া সাংবাদিকদের নিমন্ত্রণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়ালি বক্তব্য উপভোগ করছিলেন ঠিক সেই সময় ১৪১ জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি’র সমর্থকেরা মুরাদ হাসানের নামে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা ফলকটি দেখতে না পেয়ে হট্টগোল শুরু করে।
একপর্যায়ে প্রকল্পের ঠিকাদার ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল মোর্শেদ তরফদার সোহেলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ টানাহেঁচড়া করে এবং উক্ত প্রকল্পের প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনি’কে সহ মডেল মসজিদে কর্মরত শ্রমিকদের উপর অতর্কিত হামলা করে।
মুরাদ হাসান কর্মীদের এ অতর্কিত হামলায় প্রকল্পের প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনিসহ ৪জন আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। বর্তমানে তারা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে উক্ত বিষয়টি নিরসনের লক্ষ্যে তৎক্ষণাৎ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপমা ফারিসা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান, পৌর মেয়র মনির উদ্দিন, থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব ছানোয়ার হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ সহ কাউন্সিলর সাখাওয়াত আলম মুকুল’কে সাথে নিয়ে প্রকল্পের ঠিকাদার ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল মোর্শেদ তরফদার সোহেল এবং প্রকল্পের প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনি’র সাথে কথা বলে নামফলকটি পুনরায় স্থাপন করার বিষয়টি মীমাংসা করে দেন বলে জানা যায়।
কিন্তু মুরাদ হাসানের সমর্থকেরা নামফলকটি কেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বে লাগানো হয়নি এমনটি প্রশ্ন তুলে অনুষ্ঠানে হট্টগোল সৃষ্টি করে এবং তাদেরকে মারধর করে।
পরে প্রকল্পের প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান জনি বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। যার প্রেক্ষিতে মুরাদ হাসান এমপির সমর্থকেরা ১৭ জানুয়ারি বিকালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সরিষাবাড়ী উপজেলা শাখার ব্যানারে সরিষাবাড়ী বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সরিষাবাড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্ব সময়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে একটি কুচক্রে মহল সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি ও তার কর্মীদের জড়িয়ে গণমাধ্যমে যে ভুল মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনগড়া সংবাদ বলে সকলে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ সংবাদ সম্মেলনের পর অভিযোগকারী মাসুদুর রহমান জানি, পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াত আলম মুকুলকে ১নং আসামি করে ১১জনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করেন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করেছেন বলে মামলা সূত্রে জানা যায়।
মামলাটি এজাহারভুক্ত হওয়ায় পর রাতেই ২ আসামিকে গ্রেফতার করে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ মহব্বত কবীর।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, নামফলক সরানো নিয়ে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। তবে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ উভয় পক্ষদ্বয়কে সাথে নিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জামালপুর জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় নির্মিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ফলক নেই, শুধু রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভ উদ্বোধন করা ফলক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪২:৩৭ ২৭০ বার পঠিত