চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে নতুন ১০টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা চালু হয়েছে।
রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে এসব মেশিনে সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। এ নিয়ে কিডনি ওয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে ১৭টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা চালু হলো। এর আগে ওয়ার্ডে চারটি মেশিন সচল ছিল। পরে করোনা ইউনিটে স্থাপন করা তিনটি মেশিনে সাধারণ রোগীদের জন্য সেবা চালু করা হয়। এখন নতুন দশটিসহ সব মিলিয়ে ১৭টি মেশিন চালু হওয়ায় অন্তত শতাধিক রোগী ডায়ালাইসিস সেবা পাবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নতুন দশটি মেশিনে সেবা চালুর তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদী আরটিভি নিউজকে বলেন, ওয়ার্ডে স্থাপন করা এসব মেশিনে সরকারিভাবে কম খরচে রোগীরা ডায়ালাইসিস করতে পারবেন। ছয় মাসের ডায়ালাইসিস বাবদ সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা আছে। হিসেবে প্রতি সেশনে একজন রোগীর ৪১৭ টাকা খরচ পড়বে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেশনপ্রতি হাসপাতালের এই খরচ স্যান্ডরের (স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টার) তুলনায় কম। স্যান্ডরে সরকারি ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধায় সেশনপ্রতি খরচ বর্তমানে ৫৩৫ টাকা। বেসরকারি ফি (ভর্তুকি ছাড়া) সেশনপ্রতি ২৯৩০ টাকা। সেই হিসেবে হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে অনেকটা কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা পাবেন রোগীরা। স্যান্ডরে তালিকাভুক্ত অন্তত ১০০ রোগীকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে ৩০ জনের মতো রোগীকে কিডনি ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও অর্ধশতাধিক রোগী ওয়ার্ডে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। স্যান্ডরে তালিকাভুক্ত রোগীদের মধ্য থেকে তুলনামূলক বেশি গরিব–অসহায় রোগী বাছাই করে কিডনি ওয়ার্ডে তালিকাভুক্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। স্যান্ডরে তালিকাভুক্ত গরিব রোগীদের কিডনি ওয়ার্ডে গিয়ে ডায়ালাইসিস ইনচার্জের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সারি করে স্থাপন করা বেডে রোগীরা ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন। ১৩টি বেডের সবগুলোতে রোগী রয়েছেন। রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটছে নার্সদের। কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদাকেও রোগীর তদারকি করতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চমেক হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ৭ জানুয়ারি থেকে বিক্ষোভ করে রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিক্ষোভের মধ্যে সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবার পরিসর বাড়ানোর জরুরি উদ্যোগ নেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নতুন করে দশটি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে। ১১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে নতুন দশটি ডায়ালাইসিস মেশিন হাসপাতালে পৌঁছে। এরপরই মেশিনগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হয়। কিডনি ওয়ার্ডে আগে থেকে সচল চারটি মেশিনের পার্শ্ববর্তী ডাক্তারদের একটি কক্ষ একীভূত করে নতুন মেশিনগুলো স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। হিসেবে ১০ দিনের মাথায় এসব মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ করে ১১ দিনের মাথায় সেবা চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কম খরচে রোগীদের সেবা দিতে জরুরি ভিত্তিতে এসব মেশিন স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা। এর মাধ্যমে গরিব রোগীরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) নতুন এসব মেশিন চালু হওয়ায় সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবার পরিসর অনেকটা বেড়েছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আরটিভি নিউজকে বলেন, এতে গরিব রোগীরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কারণ, সরকারি নামমাত্র ফি দিয়ে রোগীরা এখানে ডায়ালাইসিস সেবার সুযোগ পাবেন। সরকারি এই ফি অবশ্যই স্যান্ডরের তুলনায় অনেকাংশে কম। রোগীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে জরুরিভাবে এসব মেশিন স্থাপন ও এর সেবা চালু করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের সামনে ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি ক্যান্সার ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। ওই ভবনে ক্যান্সারের পাশাপাশি হৃদরোগ ও কিডনি বিভাগও স্থানান্তর হবে। যেখানে সরকারিভাবে ৫০টি ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনের কথা রয়েছে। সেটি চালু হলে গরিব রোগীদের সেবার পরিসর কয়েক গুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কম খরচের ডায়ালাইসিস সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টরা।
স্যান্ডরের সেন্টারে ডায়ালাইসিস ফি হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপন করা স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেন্টারে বেসরকারিভাবে প্রতি ডায়ালাইসিস সেশনে গত বছর নিয়মিত ফি ছিল ২৭৯০ টাকা। সরকারি ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধায় সেশন প্রতি ৫১০ টাকায় সেবা গ্রহণের সুযোগ পেতেন গরিব রোগীরা। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও অতি দরিদ্র কিছু রোগী ফ্রিতে এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও ফ্রি সেশনের সংখ্যা খুবই কম। সারা বছরে ৬৫০ সেশন ফ্রির সুবিধা প্রদানের সুযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তবে সেশনপ্রতি নির্ধারিত এই ফি বছরে পাঁচ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। পিপিপির আওতায় সরকার ও স্যান্ডরের করা চুক্তিতে ফি বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। সে হিসেবে ভর্তুকি প্রদত্ত সেশনপ্রতি ফি গত বছরের ৫১০ টাকার স্থলে এবার ৫৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি ফি ২৭৯০ টাকার স্থলে দাঁড়িয়েছে ২৯৩০ টাকায়। রোগী ও স্বজনরা এই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন বিক্ষোভ করেন।
হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার বিপ্লব কুমার বড়ুয়া জানান, হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবায় খরচ সবচেয়ে কম। এখানে একজন রোগীর ছয় মাসের ডায়ালাইসিস বাবদ ২০ হাজার টাকা ফি নেওয়া হয়। মাসে আটটি করে হিসেব করলে ছয় মাসে ৪৮টির কিছু কম-বেশি সেশন ডায়ালাইসিস সেবা পাওয়া যায়। এতে সেশনপ্রতি খরচ ৪১৭ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৭:৩২ ১৬১ বার পঠিত