দেশের ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬২ জন গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এবং বিশে^ এটি একটি বিরল ঘটনা।
আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা একথা বলেন।
সংসদ সদস্যরা বলেন, ‘২০২১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, মুজিববর্ষে দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। এই ঘোষণা বাস্তবায়নে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬২ টি পরিবারকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের প্রত্যেককে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এটি বিশে^ একটি বিরল ঘটনা। জাতির পিতা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের কথা বলেছিলেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
গত ৫ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন। রীতি অনুযায়ি এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন সরকারি দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার।
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার চতুর্দশতম দিনে আজ অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুব আরা গিনি, শাজাহান খান, বজলুল হক হারুন, আ ক ম সারোয়ার জাহান, সুলতানা নাদিরা এবং জাসদের সদস্য হাসানুল হক ইনু।
তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘লন্ডনে বসে বিএনপি নেতা সাজাপ্রাপ্ত আসামী তারেক রহমান দেশে সন্ত্রাসের মদদ দিচ্ছে। লন্ডনে বসে সে বলছে দেশকে মেরামত করতে চায়, আমি বলি- তুমি কি মেরামত করবে! তোমার নিজেরই মেরামত প্রয়োজন। দেশে ফিরে আসো দেশের মানুষই তোমাকে মেরামত করবে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। ২০১৫ সালে তারা ১৫ জন পুলিশসহ ৪৯২ জন মানুষকে হত্যা করেছে। আড়াই হাজারের অধিক মানুষকে আহত করেছে। ওই সময় তারা বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্কুল, কলেজ, ভূমি অফিসসহ অসংখ্য স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়। তাদের সময় দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। বিএনপির মুখে আইনের শাসন, মানবাধিকারের কথা মানায় না।
শেখ সেলিম বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের জন্য তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের এসব কর্মকান্ডের জন্য আজ তারা ধবংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে।
জাসদের হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন দেশকে এগিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তখন বিএনপি-জামাত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা পথে কাঁটা ছড়াচ্ছেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এটা বিএনপি-জামাত ও তাদের সঙ্গীরা চান না, সহ্য হয় না। কারণ এরা বাংলাদেশ হোক এটাই চায়নি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিএনপি-জামাত ১০ দফা-২৭ দফা দিচ্ছে, দফার পর দফা দিচ্ছে। তাদের এই দফার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। তাদের দফার মধ্যে রয়েছে- অস্বাভাবিক সরকার আনা, যথাসময়ে নির্বাচন বন্ধ করা, একাত্তর-পঁচাত্তরের খুনি, রাজাকার, জঙ্গি, জামাতের পক্ষ অবলম্বনের প্রস্তাব, রাজনীতি সমাজনীতিতে খুনিদের হালাল করার প্রস্তাব, সংবিধানের চার নীতি কবর দেয়া ও ৭২-এর সংবিধান ধ্বংস করার প্রস্তাব। তাদের দফায় সাজাপ্রাপ্ত, দুর্নীতিবাজ, যুদ্ধাপরাধী, জঙ্গি, খুনি ও সন্ত্রাসীদের মুক্ত করার প্রস্তাব। রাজাকার জামাতকে নিয়ে সরকার গঠন করার প্রস্তাব।
হাসানুল হক ইনু, বিএনপি-জামাত জঙ্গিদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেকে দেশকে ও দেশের মানুষকে রক্ষায় এবং দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির ঐক্য প্রয়োজন। কোন অবস্থাতেই যেন এই ঐক্যে কেউ ফাটল ধরাতে না পারে এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
দেশের সরকারের সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরে দেশকে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করার জন্য সময়োপযোগী ভাষণ দেয়ার জন্য সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের জন্য গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৫:৫৯ ২১১ বার পঠিত