বাঙালির ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ভাত। তবে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এ খাবার না হলে বাঙালির চলে না। বারোমাসই বাঙালির পাতে চাই ভাত। তাই কঠোর ব্যায়াম মেনে চললেও ভাত এসেই ভেস্তে যায় বাঙালির ডায়েট পরিকল্পনা। তবে ভাত ডায়েটের ক্ষেত্রে বাধা নয় বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ভাত, প্রথমেই খাদ্যতালিকা থেকে এ খাবারটি বাদ দেন অনেকে। আবার কারও কারও মতে, ডায়েটে ময়দা রাখা গেলেও ভাত রাখা একদমই ঠিক নয়। কিন্তু ভাত খেলে সত্যিই কি ওজন বাড়ে?
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পুষ্টিবিদদের মতে, ভাত খেলে মোটা হয়ে যেতে হবে—প্রথমে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এমন ভুল ধারণা পুষে রাখার কোনো মানেই নেই।
পুষ্টিবিদরা জানান, সুষম খাবারের সঙ্গে অল্প পরিমাণে ভাত খাওয়া যেতে পারে। এমনকি ফ্যানা ভাত খেলেও মোটা হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ভাত খেলে ওজন তো বাড়েই না বরং উচ্চ রক্তচাপ এবং আরও অনেক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেক্ষেত্রে সারা দিনে ১৫০ গ্রাম মতো ভাত খাওয়া যেতে পারে। এতে কমপক্ষে ৫০০ ক্যালোরির বেশি শরীরে ঢোকে না, সঙ্গে কম তেল দিয়ে রান্না করা ডাল, সবজি, মাছ, ডিম খেলে এক দিকে যেমন যথাযথ পুষ্টি পাওয়া যায়, তেমনি ক্যালোরির হিসাব ঠিক থাকে।
ভাতে থাকা স্টার্চ, শরীরে শক্তি জোগাতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এতে থাকা ফাইবার পেটের সমস্যা কমাতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে। ভাত ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। তাই ভাত খেলে চিট মিল নেয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তা ছাড়া ভাত খেলে সেরেটোনিন নামে হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে বলে অল্প খেলেও শরীর এবং মন চাঙ্গা থাকে। ভাতে শরীরের জন্য উপকারী প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে উপকারিতা আরও বাড়ে। যেমন বিনসের সঙ্গে খেলে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। ডাল-তরকারির সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলে প্রচুর আয়রন মেলে। এ কারণে ভাত খাওয়া একেবারে বন্ধ করা ঠিক নয়।
পুষ্টিবিদরা তাই রোজকার পাতে ভাত রেখেও ওজন কমানোর উপায় বাতলে দিয়েছেন। এ জন্য ভাত খাওয়ার জন্য অবলম্বন করতে হবে কিছু কৌশল।
ওজন কমানোর জন্য ভাত মেপে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলেই ওজন বাড়ার সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। তবে ভাত খাওয়ার পরিমাণ একবারে না কমিয়ে ধাপে ধাপে কমানোর পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। আগে যদি দুই প্লেট ভাত খেতেন, তাহলে ওজন কমাতে চাইলে তা প্রথমে এক প্লেটে নামিয়ে আনুন। এরপর ধীরে ধীরে ভাতের পরিমাণ আরও কমিয়ে দিন।
ভাতের সঙ্গে যদি বেশি পরিমাণে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, তা হলে ওজন কমানো আরও সহজ হবে। তবে কাঁচা সবজির সালাদ না খাওয়াই ভালো। এতে অ্যাসিডিটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভাতের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সবজি নিন আর সঙ্গে নিন পরিমিত মাছ অথবা মাংস এবং ডাল।
ভাত খেয়েও ওজন কমানোর জন্য ভাত রান্নার ধরন পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। ভাত রান্না করে ভাতের মাড় ঝরিয়ে ফেলুন। এতে অতিরিক্ত ক্যালরি চলে যাবে। এ ছাড়া ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ি, পোলাও ও বিরিয়ারিসহ তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৭:২৭ ১৯৯ বার পঠিত