সাফ টুর্নামেন্ট মানেই যেন বাংলাদেশের মেয়েদের ফাইনাল এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলের খেলায় তিনবার ফাইনালে উঠেছে বাংলার বাঘিনীরা। প্রতিবারই শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল। তবে জাতীয় দলের হয়ে সাবিনা খাতুনরা শিরোপা জিতলেও অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেপালের মেয়েরা। এবার ঘরের মাটিতে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই দল।
আজ (৭ ফেব্রুয়ারি) কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অন্তত এক পয়েন্ট আদায় করার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার জুনিয়রের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক ও আকলিমা আক্তারের জোড়া গোলে ভুটানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠেছে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। একই ভেন্যুতে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় শিরোপার লড়াইয়ে নেপালের মুখোমুখি হবে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
এদিন ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় অন্তত ড্র। এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণ চালায় বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম দিকে কিছুটা অগোছালো থাকলেও সময় যত এগিয়ে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা ততই খোলস ছেড়ে বের হয়ে খেলতে থাকে। যার ফলে ম্যাচের ২২তম মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। স্কোরশিটে নাম লেখান ১১ নম্বর জার্সি পরিহিত ফরোয়ার্ড আকলিমা খাতুন।
এর ঠিক পরের মিনিটেই ভুটানের ডি-বক্সে ট্যাকেলের শিকার হন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড। তবে পেনাল্টিতে স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন শাহেদা আক্তার রিপা। তবে ২৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। কর্নার থেকে নেওয়া উন্নতি খাতুনের শট নিজের আয়ত্তে নিয়ে স্কোরশিট ২-০ করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এরপর আর কোনো গোল না হলেও স্বস্তিতেই বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
বিরতির পর আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ৪৭তম মিনিটে আকলিমার শট গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৪৯তম মিনিটে শামসুন্নাহারকে দারুণ সুযোগ তৈরি করে দেন শাহেদা। তবে শাহেদার ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি বাঘিনী কাপ্তান। ৫০তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। তবে ভুটানের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় সেই বল উড়িয়ে মেরে ডি-বক্স থেকে বাইরে করে বিপদমুক্ত করেন।
বিরতির পর বারবার চেষ্টা করেও ফিনিশিংয়ের কমতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। তবে মিনিট তিনেক পরই ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন শামসুন্নাহার। ৫৩তম মিনিটে শাহেদার পাস বেশ খানিকক্ষণ দৌড়ে ভুটানের ডি-বক্সের কাছাকাছি নিয়ে গোলকিপারকে কাটিয়ে জাল বরাবর শট নেন তিনি। বল বারের কানায় লাগলেও ভাগ্যের সহায়তায় পরে জালে জড়িয়ে যায়। এরপর ম্যাচের ৬০তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন আকলিমাও। ভুটানের রক্ষণে চেরা পাসের শটে গোল করেন এই ফুটবলার।
এর ঠিক এক মিনিটের পরই দলের হয়ে শেষ গোল করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের হ্যাটট্রিকও পূরণ করেন শামসুন্নাহার। এরপর ৬৯তম মিনিটে বাংলাদেশের গোলকিপার রুপণা চাকমাকে তুলে নেন কোচ ছোটন। তারপর একের পর এক সুযোগ তৈরি হলেও আর কোনো গোল আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ভুটানকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে জায়গা করলো সাবিনা খাতুনের উত্তরসূরিরা।
শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারানোর সুখস্মৃতি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৩:৫০ ১৫৪ বার পঠিত