ইসমাইল হোসেন জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে সুমন ফার্মেসীর বিরুদ্ধে মেয়াদ উর্ত্তীণ ইনজেকশন বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন শিখা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী নারী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ভুক্তভোগী নারী এ আর জুট মিলস্ সংলগ্ন মেইন রোডের পূর্ব পাশে রিয়াজ ফার্মেসিতে আসেন তার ক্রয়কৃত ইনজেকশন শরীরের পুশ করতে কিন্তু ইনজেকশনটি ওই ফার্মাসিস্ট তার শরীরে পুশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তখন ওই নারী ফার্মাসিস্ট কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই ইনজেকশনের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ এ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তাই তিনি এই ইনজেকশনটি পুশ করতে পারবেন না বলে জানান। পরে এ বিষয়টি সুমন ফার্মেসিকে অবগত করলে তারা প্রথমে অবিশ্বাস করে এবং মেনে নিতে চায় না। পরে একই ইনজেকশন পুনরায় ক্রয় করতে চাইলে, তারা আবারও ওই মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন বের করে দেন। পরে সুমন ফার্মেসীর লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ সমস্ত ইনজেকশন নষ্ট করে ফেলেন এবং ভুক্তভোগী ওই নারীকে অন্য ফার্মেসি থেকে ইনজেকশন কিনে এনে দেন। এ বিষয়টি সুমন ফার্মেসী ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও (৮ ফেব্রুয়ারি) বুধবার সকালে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এই নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন মহলের মাঝে চাপা ক্ষোভসহ সমালোচনার ঝড় বইছে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, সরিষাবাড়ী পৌর সভার শিমলা বাজারস্থ এলোপ্যাথিক ঔষধ বিক্রেতা ও ব্যাবস্থাপক প্রোপাইটার ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় (সুমন) ফার্মেসীর থেকে গত (৪ ফ্রেব্রুয়ারী) পৌরসভার নাছের উদ্দিন উদ্দিন প্রি-ক্যাডেট এন্ড হাই স্কুল সামনে প্রধান সড়কের পার্শ্বে বসবাসরত রিহান আলীর স্ত্রী, শিখা আক্তার(৩৬) এর জন্য ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনষ্টিটিউট এ্যান্ড হাসপাতাল এর চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্রানুযায়ী ৪টি মেকোলাজিন এমজি ১এমএল ,আইভি/আইএম ২১০০২ ইনজেকশন ক্রয় করেন।
এ সময় ক্রয়কৃত ৪টি ইনজেকশন এর মধ্যে শিখা আক্তার ১টি ইনজেকশন সুমন ফার্মেসী থেকেই পুশ করে বাকি ৩টি ইনজেকশন নিয়ে বাসায় চলে আসেন। শিখা আক্তারের স্বামী রেহান আলী জানান, ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই সে অসুস্থতায় ভুগছে। তবুও সুস্থতার আশায় দ্বিতীয় ইনজেকশনটি পুশ করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি এসব ইনজেকশনের মেয়াদ গত ২০২১ ফেব্রুয়ারি হতে ২০২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত করা সময় শেষ হয়ে গেছে।
পরে এ মেয়াদ উত্তীর্ন ইনজেকশনের বিষয়টি সাংবাদিকদের অবগত করেন ভুক্তভোগী শিখা আক্তার ও তার পরিবার। পরে এই নিয়ে সুমন ফার্মেসী ও রোগীর পরিবারের মধ্যে এক সমঝোতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রোগীর দায় দায়িত্ব সুমন ফার্মেসিকে নিতে বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে এলোপ্যাথিক ঔষধ বিক্রেতা ও ব্যাবস্থাপক প্রোপাইটার ডাঃ সুজিৎ কুমার রায়(সুমন) ফার্মেসীর বিরুদ্ধে আইনগতভাবে শাস্তীমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট আশুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এছাড়াও সচেতন মহল বলছেন, সুমন ফার্মেসীর বিরুদ্ধে চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্র ছাড়াই এন্টিবায়োটিক সহ নারকোটিক ঘুমের ঔষধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে এবং সে একটি ড্রাগ লাইসেন্স দিয়ে ৩টি ফার্মেসি পরিচালনা করছেন। এটি কতটুকু বলে আইনগত বৈধতা আছে। সেটি প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার দাবি জানান সচেতন মহল।
এদিকে ভুক্তভোগী রোগী শিখা আক্তার জানান,সুমন ফার্মেসী থেকে ইনজেকশন ক্রয় করে একটি ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই তাঁর ডান হাতের মাংসপেশীতে কালো জখম ও ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে এবং শরীরে নানা উপস্বর্গ দেখা দিচ্ছে বলে তিনি সংশয়ে আছেন। তাই তিনি বলেন আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মেয়াদ উত্তীর্ন এলোপ্যাথিক ঔষধ বিক্রেতা ও ব্যবস্থাপক প্রোপাইটার ডা: সুজিৎ কুমার রায় (সুমন) এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ,মেয়াদ না দেখে ইনজেকশন বিক্রি করা আমার উচিত হয়নি। এটা আমার ভুল হয়েছে, এজন্য আমি দুঃখিত। ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর হবে না বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলা (বিসিডিএস) এর সভাপতি রবিউল কবীর উজ্জল জানান, সুমন ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ন ইনজেকশন বিক্রি করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
এবিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কন্সালটেন্ট( সার্জারী) ডাঃ রাশেদা পারভীন মুন্নী জানান, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বা ইনজেকশন শরীরের জন্য খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা- এরকম ভুলের কারণে জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে জীবন নাশ হতে পারে। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৬:১৪ ২৫৩ বার পঠিত