মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে নানা জাতের বিদেশি সবজি। এসব সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সাইফুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন নামে দুই কৃষক। তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও সুপারশপে।
উপজেলার মাগুড়া গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে ভিনদেশি নানা প্রজাতির সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি আইচবার্গ লেটুস, ব্রকলি, রেড ক্যাবেজ, রোমান, স্যালারি পাতা, ক্যাপসিকাম, পাচলি, চাইনিজ ক্যাবেজ প্রভৃতি চাষ করেন। এসব সবজির বীজ ঢাকা থেকেই সংগ্রহ করেন। কয়েক বছর ধরে এসব সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন তিনি।
মাগুড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে থাইল্যান্ডের আইচবার্গ লেটুস জাতের সবজি চাষ হয়েছে। দেখতে ঠিক পাতা কপির মতোই। ক্ষেত থেকে তোলা হচ্ছে সবজি। দু-তিন দিন পর পর ঢাকার নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলোতে পাঠানো হয় এই সবজি। বেশ দাম পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক সাইফুল।
সাইফুলের দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী বাগানপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেনও চাষ করছেন বিদেশি সবজি। তিনি এক বিঘা জমিতে চাষ করছেন আইচবার্গ লেটুস জাতের থাইল্যান্ডের সবজি। ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু করেছেন। তাকে দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করছেন এলাকার প্রথম বিদেশি সবজি চাষি সাইফুল ইসলাম। বিদেশি সবজি চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক দিনমজুরের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সীমান্তঘেঁষা তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের মাগুড়া, দর্জিপাড়া, কানকাটা ও শারিয়ালজোত ‘সবজি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সারা বছর এসব গ্রামের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে এ এলাকায় বিদেশি সবজি আবাদ কৃষিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
সাইফুল ইসলাম জানান, ১০-১২ বছর আগে ঢাকার সাভারে একটি বিদেশি সবজির ফার্মে কাজ করে শিখেছিলেন চাষ পদ্ধতি। সে অভিজ্ঞতা থেকেই বাড়িতে এসে অন্যের কাছ থেকে জমি বন্ধক নিয়ে শুরু করেছিলেন বিদেশি সবজি চাষ। প্রথম প্রথম দুই-তিন বছর সমস্যায় পড়লেও পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায়ীদের কাছে তার সবজির চাহিদা বেড়ে যায়। উৎপাদিত সবজির বেশ চাহিদা রয়েছে ঢাকার নামিদামি রেস্টুরেন্টে। স্থানীয়ভাবে এ সবজির তেমন একটা পরিচিত না থাকায় দেশের বিভিন্ন নামিদামি হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সুপারশপেই চলে যাচ্ছে এই সবজি। প্রশিক্ষণ না থাকায় অন্য কৃষকরা এ সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন না।
আরেক কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, সাইফুল ভাইয়ের দেখাদেখি নতুনভাবে শুরু করেছি। এক বিঘার মতো জমিতে লাগিয়েছি থাইল্যান্ডের আইচবার্গ লেটুস জাতের সবজি। স্থানীয় বাজারে এ সবজি পরিচিত না থাকায় আমাকে ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। বেশ দাম পাচ্ছি। আশা করছি সামনে আরও বেশি জমিতে আরও কয়েক প্রজাতির সবজি আবাদ করবো।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানকার মাটি দোআঁশ ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশি সবজি আবাদ করা যাচ্ছে। এখানে এখন আইচবার্গ লেটুস, ব্রকলি, রেড ক্যাবেজ, রোমান, স্যালারি পাতা, ক্যাপসিকাম, পাচলি, চাইনিজ ক্যাবেজ, বিটরুট, স্কোয়াশ, ফ্রেঞ্চ বিনের মতো সবজি চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি সবজি উৎপাদন কৃষিক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাড়বে এর আবাদ, লাভবান হবেন কৃষক। কৃষকরা যাতে কম খরচে অল্প সময়ে বিদেশি জাতের সবজি চাষ করে লাভবান হতে পারেন, সে জন্য কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩০:২৬ ১৭৪ বার পঠিত