ডালে ডালে ভরা হাঁড়িভাঙার মুকুলে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ডালে ডালে ভরা হাঁড়িভাঙার মুকুলে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা
শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



ডালে ডালে ভরা হাঁড়িভাঙার মুকুলে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা

মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি : বিদায় নিয়েছে শীত, এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতিতে বইছে আগুনঝরা ফাগুনের গান। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ। কোকিলের কুহু কুহু কলতান আর আমের মুকুলের সুমিষ্ট ঘ্রাণে আন্দোলিত চাষিদের মন। বসন্তময় ঋতু বৈচিত্রের এই ফাগুনে আমগাছের দিকে তাকিয়ে ডালে ভরা মুকুলে স্বপ্ন বুনছেন রংপুরের চাষিরা।
বছরের নির্দিষ্ট এই সময় জুড়ে তাই চাষি তো বটেই, কম-বেশি সব শ্রেণির মানুষের দৃষ্টি থাকে সবুজ পাতায় ঢাকা আমগাছের শাখা-প্রশাখায়। প্রকৃতি বৈরী না হলে এবারও সাধারণ আমের পাশাপাশি হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা।
সম্প্রতি রংপুর সদরের পালিচড়া, বদরগঞ্জের শ্যামপুর, মিঠাপুকুরের খোড়াগাছসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বসন্ত বাতাসে আম গাছে দোল খাচ্ছে হাঁড়িভাঙা আমের মুকুল। সদ্য মুকুল ফোটার এমন দৃশ্য এখন শুধু বিস্তৃত গ্রামীণ জনপদেই নয়, শহরের গাছে গাছেও সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আমের মুকুল।
জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই এখন প্রচুর আমবাগান রয়েছে। ফল হিসেবে আম লাভজনক মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমবাগানের সংখ্যা। ঘাম ঝড়ানো ধান-চালসহ অন্যান্য ফসলে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া চাষিদের হতাশার দিন শেষ হতে যাচ্ছে হাঁড়িভাঙা আমে। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে এখনকার চাষিদের জীবনমান।
অনেক ধান চাষি এখন আম চাষ করছেন। প্রতিবছর আম চাষ করে লাখ লাখ টাকার আয়ে শুরু হয়েছে তাদের দিন বদলের গল্প। এখন ভাগ্য বদলে গেছে হাজার হাজার আম চাষি ও কৃষকের। হাঁড়িভাঙ্গা আম যেন রংপুরের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। হাঁড়িভাঙা জাতের পাশাপাশি এখন আমরূপালী, বারি-৪ সহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হচ্ছে রংপুরে।
বছরজুড়ে চাষিদের নিয়মিত পরিচর্যার কারণে হাঁড়িভাঙা আমের আশানুরূপ ফলন নিয়ে চাষিদের প্রত্যাশা বেড়েছে। এবার মাঘের শেষ হতেই মুকুলে ছেয়ে গেছে অনেক আমবাগান। ফাল্গুনী হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে দোল খাওয়া স্বর্ণালী মুকুলের একেকটি ডালপালা জুড়েই যেন চাষিদের স্বপ্ন। রংপুরের বিষমুক্ত ও অতি সুমিষ্ট আঁশহীন হাঁড়িভাঙা আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে এই আম উৎপাদনের পরিমাণও।
রংপুর সদর এলাকা ছেড়ে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে যেতে দেখা মিলবে সারি সারি গাছ। রাস্তার দুইপাশে যেন হাঁড়িভাঙা আমগাছের সবুজ বিপ্লব। ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির আইলে আইলে লাগানো হয়েছে আমের গাছ। বাদ পড়েনি বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, পুকুরপাড়, বাড়ির উঠান। এখন গাছে গাছে দোল খাচ্ছে মুকুল। একই চিত্র মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, সর্দারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুস্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়া এলাকাতেও। এসব এলাকার আম বাগান মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধে ভরে উঠেছে।পথচাচিরা মুগ্ধ নয়নে আম বাগানের দোলা খাওয়া মুকুল দেখে বিমোহিত হচ্ছেন।
আমের মুকুলে চাষিরা খুশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়লেই আগেভাগে আসা মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ফলনেও প্রভাব ফেলবে।
বদরগঞ্জের শ্যামপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী সোলেমান মিয়া বলেন, বছরের এই আম বিক্রি করেই অনেক চাষি মেয়ের বিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করেন, বড় ঋণ পরিশোধ করেন, মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তাই গাছ, মুকুল আর আম অনেকেরই বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন।
মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের সরকারপাড়ার আমচাষি মোস্তনা বেগম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের আমের মুকুল এলে কৃষকরা আম বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঝড় কিংবা বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের ফলন ভালো হবে। হাঁড়িভাঙ্গা আম এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এদিকে হাঁড়িভাঙা আম ঘিরে চাষিদের পাশাপাশি অনেক তরুণ-যুবকও স্বপ্ন বুনতে থাকে ভালো ব্যবসার। একারণে আমগাছে মুকুল এলেই দৌঁড়ঝাঁপ বাড়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর। ইতোমধ্যে বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরের বিভিন্ন এলাকার আমবাগান বিক্রিও হয়ে গেছে। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আগাম যোগাযোগ শুরু করেছেন আমচাষিদের সাথে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রংপুরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ২১৫ হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয় ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন। মুকুল আসার ৪ মাসের মধ্যে আম কৃষকের ঘরে ওঠে।
আম চাষিরা বলেন, হাঁড়িভাঙা আম বেশি দিন সংরক্ষণে রাখা যায় না। এই আম কীভাবে বেশি দিন সংরক্ষণে রাখা যাবে, এ নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। তাহলে এই আম বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। একই সঙ্গে রংপুরে একটি বিশেষায়িত হিমাগার করা গেলেও বেশি উপকৃত হবেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। যার সম্ভাব্য ফলন প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ হাঁড়িভাঙা আমের জন্য প্রসিদ্ধ। এছাড়াও ময়েনপুর, রানীপুকুর, চেংমারী, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে দিন দিন হাঁড়িভাঙা আমের বাগান বাড়ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান বলেন, রংপুর এখন হাঁড়িভাঙা আমের জন্য বিখ্যাত। এখন আমের গাছে গাছে মুকুল এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা চাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে। এখন আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়ে তাহলে সমস্যা হবে না। সব মিলিয়ে প্রকৃতি বিরুপ না হলে, এবারও আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি সম্প্রাসারণ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে হাঁড়িভাঙা দেশের গণ্ডি পেরিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাঁড়িভাঙা আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। গত বছর গত বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে এবার ৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য জেলার আম যখন শেষ পর্যায়ে, তখনই হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসতে শুরু হয়। এই আম প্রায় দেড় মাস বাজারে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৪:৫৩   ১৫২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
ভোলায় বিপুল অস্ত্রসহ ৭ সন্ত্রাসী আটক
আসাম-মেঘালয় সীমান্তে পাঁচ বাংলাদেশি আটক
শরীয়তপুরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন
ফরিদপুরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুসের শোভাযাত্রা
চেন্নাই পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল
আওয়ামী লীগের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হচ্ছে : রিজভী আহমেদ
চোরাচালান প্রতিরোধে কোস্টগার্ডকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কিছু চাপিয়ে দেবে না: ডা. তাহের

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ