সন্ধ্যা সাতটায় আর্মি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এ সময় বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ও বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। এরপর জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠে। জাতীয় সঙ্গীতের পর একে একে মাঠে প্রবেশ করে মার্চপাস্টে অংশ নেন ২৪ ডিসিপ্লিনের চার হাজার ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তরা। ঢাকা , খুলনা , চট্টগ্রাম , বরিশাল , রাজশাহী , সিলেট , রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ক্রীড়াবিদদের মার্চপাস্টের সময় জায়ান্ট স্ক্রিটে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দর্শনীয় স্থানের দৃশ্য ভেসে উঠে। হাততালি দিয়ে ক্রীড়াবিদদের অভিবাদনের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপরেই মাঠ প্রদক্ষিণ করে যুব গেমসর মাসকট বাবুই পাখি। মাথা ও পাখা নাড়িয়ে বাবুই পাখি প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। কনফেত্তি ছড়িয়ে ক্রীড়াবিদদের আনন্দিত করা হয়। পরে শপথবাক্য পাঠ করেন ১৪ বারের দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। বিচারকদের শপথবাক্য পাঠ করান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া সাবেক ফিফা এলিট রেফারি তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান। ২-২২ জানুয়ারি সকল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে খেলার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর বেজে উঠে গেমসের থিম সং ‘ছুয়ে দিল আসমান’।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গণের দ্রুপদি মানব, প্রত্যয়ী ক্রীড়া সংগঠক ও জীবনমুখি সৃজনশীল কীর্তিমান পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নামে প্রবর্তিত ‘শেখ কামাল বাংলাদেশ যুব গেমসের দ্বিতীয়’ আসরের চুড়ান্ত পর্ব আজ শুরু হয়েছে । জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে যুব সমাজ। সেই যুব সমাজ সুপথে পরিচালিত হলে দেশ এগিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশীয় গেমসে ১৯টি স্বর্ণপদক জিতে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ^কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল সবুজের যুবারা। গত বছর সাফ নারী ফুটবলে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস তৈরী করেছে মেয়েরা। এছাড়া সাফের অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২০ পর্যায়েও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আমাদের মেয়েরা। সর্বশেষ কাজাখস্তানে ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে নতুন ইতিহাসে বাংলাদেশের নাম লিখিয়েছেন ইমরানুর রহমান। এ সবই প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনার সুফল।
বিওএ সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা ও দিক নির্দেশনা এবং অনুপ্রেরনার কারণেই সেনাবাহিনী ও বিওএ দেশের সর্ববৃহৎ এই যুব গেমসের আয়োজন করতে পেরেছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে স্মরণ করতে চাই স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের ক্রীড়াঙ্গণেও রচিত হচ্ছে অনেক সাফল্যের নতুন অধ্যায়। যার সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং অনুপ্রেরণায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শত ব্যস্ততা সত্বেও আমাদের মাঝে উনার উপস্থিতি প্রমান করে কতটা ক্রীড়া অনুরাগী তিনি। দেশের সর্ববৃহৎ এই আয়োজন সফল হতো না যদি উনার অনুপ্রেরণা এবং সার্বক্ষণিক নির্দেশনা আমরা না পেতাম। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
২০১৮ সালে প্রথম বাংলাদেশ যুব গেমসে ২১টি ডিসিপ্লিনে অংশ নিয়েছিল ৩৬ হাজার ৫৯৪জন ক্রীড়াবিদ। এবার আরও তিনটি ডিসিপ্লিন জিমন্যাস্টিকস, রাগবি ও সাইক্লিং বাড়িয়ে ক্রীড়াবিদের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তোমরা কৃতিত্ব ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেই আজ চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হয়েছ। অভিনন্দন তোমাদের। চূড়ান্ত পর্বে তোমরা সেরাটা দিতে পারবে এটাই বিশ^াস করি। আগামীতে আরও কৃতিত্ব দেখিয়ে তোমরা এগিয়ে যাবে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। আমরা বিশ^াস করি, তোমাদের মধ্য থেকে আগামীর তারকা বের হয়ে আসবে। যারা বাংলাদেশের সুনাম বিশে^র দরবারে আরও বৃদ্ধি করবে। খেলাধূলা তরুণ সমাজের বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তাই বিওএ খেলাধূলাকে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণকে আধুনিকতায় রূপান্তরের মাধ্যমে খেলাধূলাকে যুগোপযোগী করার বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনাকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর জ্যৈষ্ঠপুত্র জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। শেখ কামালের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে এবারের যুব গেমস। আর এর নামকরণ করা হয়েছে শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস। এবারের আসরে ২৪টি ডিসিপ্লিনে আন্ত:উপজেলা, আন্ত:জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ, অফিসিয়াল, টেকনিক্যাল কর্মকর্তা অংশগ্রহন করছে। গেমসের মূল পর্ব এখন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্রীড়াবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। এই গেমস সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সেনাবাহিনী প্রধান ও বিওএ সভাপতি জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের মশাল প্রজ্জ্বলন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায়। পর্যায়ক্রমে মশালটি বিভিন্ন জেলা প্রদক্ষিণ করে আবাহনী ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেমসের চুড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মশাল প্রজ্জ্বলন করেন ইমরানুর রহমান ও মারজিয়া আক্তার। খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করার পর মনোজ্ঞ ডিসপ্লে প্রদর্শন করেন শহিদ আনোয়ার গার্লস স্কুল ও ভারতেশ^রী হোমসের শিক্ষার্থীরা। পরিশেষে তিন মিনিটের আতশবাজির রোশনাইয়ের মাধ্যমে পর্দা উঠে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস চুড়ান্ত পর্বের।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩০:২৬ ১৫১ বার পঠিত