গাইবান্ধায় বিআরটিএ ‘টোটন দা’র কাছে জিম্মি !

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » গাইবান্ধায় বিআরটিএ ‘টোটন দা’র কাছে জিম্মি !
সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩



গাইবান্ধায় বিআরটিএ ‘টোটন দা’র কাছে জিম্মি !

মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি:(বিআরটিএ) অফিসে দালাল ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। দালাল ছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়নসহ বেশির ভাগ কাজ করা প্রায় অসম্ভব। এমনও অভিযোগ আছে, টাকা দিলে দিতে হয় না ড্রাইভিং পরীক্ষাও!
অন্যদিকে, টাকা নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। সেবা পাওয়ার আশায় তিন থেকে আট হাজার টাকা দিয়েও কেউ কেউ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এসবের নেপথ্যে রয়েছেন ওই অফিসের সিল কন্ডাক্টর টোটন!
গতকাল রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সরেজমিনে টানা নয় ঘণ্টার অনুসন্ধানে মেলে এসব তথ্য। চাহিদা মতো টাকা দিয়েও হয়রানির শিকার অন্তত আটজনের সঙ্গে কথা বলে । সবার মুখে কেবল একটিই নাম ‘টোটন দা’।
টাকা নেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে। সেবা পাওয়ার আশায় তিন থেকে আট হাজার টাকা দিয়েও কেউ কেউ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এসবের নেপথ্যে রয়েছেন ওই অফিসের সিল কন্ডাক্টর টোটন
ভুক্তভোগীরা জানান, কেবল গাইবান্ধা নয়, টোটন সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে আশপাশের জেলাতেও। তাদের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা সংগ্রহ করেন টোটন। তাদের একজন মো. ফারুক মিয়া। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শয়েতপুর খেজমতপুর গ্রামে। বাবার নাম আজিজার রহমান।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি)সকালে বিআরটিএ অফিসের সামনে ঘুরঘুর করছিলেন ফারুক। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য সেবাপ্রত্যাশী সেজে তার সঙ্গে কথা বলতেই অফিসের সামনে থেকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে যান তিনি। বলেন, ‘গ্যারান্টি শতভাগ। আপনি শুধু ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেবেন। এরপর ডোপ টেস্ট করবেন। ডোপ টেস্টের কাগজ আনার পর বাকি কাজ অর্থাৎ লাইসেন্স আপনার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার আর টোটনের।’ যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও দেন ফারুক।
একটু পর বিআরটিএ অফিসের নিচে আসতেই দেখা হয় নাম না জানা আরেক দালালের সঙ্গে। মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্সের কথা বলতেই এগিয়ে এসে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়া যাবে। তবে, ১০ হাজারের নিচে হবে না। ব্যাংকেই জমা দিতে হয় ছয় হাজার টাকা।’
গ্যারান্টি শতভাগ। আপনি শুধু ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেবেন। এরপর ডোপ টেস্ট করবেন। ডোপ টেস্টের কাগজ আনার পর বাকি কাজ অর্থাৎ লাইসেন্স আপনার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার আর টোটনের দালাল ফারুক মিয়া শুধু ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে হবে কি না— জানতে চাইলে বলেন, ‘হবে না। কারণ, বিআরটিএ অফিসেও টাকা খাওয়াতে হয়।’
দুপুরের দিকে কথা হয় আরেক ভুক্তভোগী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জোতগোকুল গ্রামের আজিয়ার রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে পরিচয় হয় বিআরটিএ অফিসের টোটনের সঙ্গে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে তাকে চার হাজার টাকা দিই। দুই মাস পর হঠাৎ কল করে ডেকে লার্নারের কাগজ হাতে ধরিয়ে দেন। সেদিন দুই হাজার টাকা দিই। তারপর আর খোঁজ নেই। কিছুদিন পর কল করে বলে, আপনার নম্বর ভুল হয়েছে, নতুন করে আবার লার্নার করতে হবে। আবারও দুই মাস আগে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত লাইসেন্স হাতে পাইনি। তিন দফায় প্রায় আট হাজার টাকা দিয়েছি। এখন বলছে, বগুড়া বা রংপুর থেকে ডোপ টেস্ট করতে হবে। তারপর ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। গত এক বছর ধরে শুধু ঘুরছি। ঠিক মতো কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু হয়রান হচ্ছি।’
আরেক ভুক্তভোগী গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রশিদুল ইসলাম। বলেন, পেশাদার লাইসেন্স আছে আমার। মোটরসাইকেল সংযোজনের জন্য লার্নার করি। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষার তারিখের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। পরে অফিসে যোগাযোগ করলে তারা হাতে লিখে তারিখ বসিয়ে দেয়। কিছু দিন পর অফিসের লোকজন বলে এ লার্নার চলবে না। কারণ, এটা হাতে লেখা। নতুন করে আবার লার্নার করতে হবে।
প্রায় এক বছর আগে পরিচয় হয় বিআরটিএ অফিসের টোটনের সঙ্গে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রথমে তাকে চার হাজার টাকা দিই। দুই মাস পর হঠাৎ কল করে ডেকে লার্নারের কাগজ হাতে ধরিয়ে দেন। সেদিন দুই হাজার টাকা দিই। তারপর আর খোঁজ নেই। কিছুদিন পর কল করে বলে, আপনার নম্বর ভুল হয়েছে, নতুন করে আবার লার্নার করতে হবে। দুই মাস আগে আবারও পরীক্ষা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত লাইসেন্স হাতে পাইনি। তিন দফায় প্রায় আট হাজার টাকা দিয়েছি। এখন বলছে, বগুড়া বা রংপুর থেকে ডোপ টেস্ট করতে হবে। তারপর ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। গত এক বছর ধরে শুধু ঘুরছি। ঠিক মতো কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু হয়রানি করা হচ্ছে
ভুক্তভোগী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জোতগোকুল গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম
আমার লার্নার থাকতে কেন লার্নার করব— এমন প্রশ্ন করলে তারা সহকারী পরিচালকের (এডি) রুমে নিয়ে যান। তিনি ১৫ দিন সময় নেন।
রশিদুল ইসলাম বলেন, লার্নারের কথা বলে অনেক সময় চলে গেছে। এটা শুধুই হয়রানি। সাধারণ মানুষ তো আর সহকারী পরিচালকের রুমে যেতে পারেন না।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খেজমতপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ড্রামট্রাকের চালক আনিছ মিয়া বলেন, আমার পেশাদার মোটরযানচালকের লাইসেন্স আছে। মেয়াদ শেষ হয়েছে। নবায়ন করার জন্য ঘুরছি। কিন্তু এই অফিসের সবাই এত ব্যস্ত যে কথা বলারই সময় নেই। তবে আমি যত দূর জানি, এখানে টাকা দিলে সব কাজ হয়। এর আগেও নবায়ন করতে অতিরিক্ত টাকা লেগেছে।
আমার কোনো স্টাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। অভিযোগের সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে রবিউল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, গাইবান্ধা বিআরটিএ
এসব অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), গাইবান্ধার সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি জেলায় মোট লাইসেন্সধারীর সংখ্যা কত এবং কতগুলো যানবাহনের বিপরীতে কতগুলো লাইসেন্স আছে— এই তথ্যও তিনি দিতে পারেননি। সাত দিন সময় চেয়ে নেন।
রবিউল ইসলাম বলেন, আমার কোনো স্টাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। অভিযোগের সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৪:০৩   ১৮৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


নাটোরে আওয়ামী লীগ কর্মীকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল
পাকিস্তানে বড় বিক্ষোভের প্রস্তুতি ইমরান খানের দলের, ঠেকাতে তোড়জোড় সরকারের
রাজধানীতে মাদকসহ গ্রেফতার ৮
পারমাণবিক যুদ্ধের সতর্কবার্তা কিমের
রাস্তার চার ভাগের তিন ভাগই দখলে, কোনো প্রকল্পেই মিলছে না সুফল!
অন্যায়ভাবে হত্যা করার ভয়াবহতা
ইতিহাসের এই দিনে
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
কুয়াকাটায় প্লাস্টিক দূষনের ভয়াবহতা চরমে

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ