বুধবার (১ মার্চ) শহরের পুরাতন কোর্ট রোড এলাকায় জেলা গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে অতর্কিত হামলার শিকার হন ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দার। পরদিন সদর মডেল থানায় মামলা করেন তিনি। মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আতিকুজ্জামান সোহেল ও তার সহকারী রিপনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী চিকিৎসক বিধান চন্দ্র পোদ্দার জানান, রাজধানীর মাতুয়াইল শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক (শিশু) হিসেবে তিনি কর্মরত। হামলার দিন জেলা গণগ্রন্থাগারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান ছিল।
ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব কামরুল হাসান মিলন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক এবং বিএমএ-র জেলা সহসভাপতি হওয়ায় আমাকে আগেই খবর দেয়া হয়েছিল। মহাসচিব নারায়ণগঞ্জে আসার পর তার অনুরোধে আমি গাড়িতে উঠে বসি। এরপর গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে পৌঁছে দেখি সেখানে ডা. সোহেলসহ নিজাম অলোক এবং বেশ কয়েকজন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি গাড়ি থেকে নামতেই সোহেল আমাকে বলল, তুই এখানে কেন? এরপরই চার-পাঁচজন মিলে আমাকে অতর্কিতভাবে মারধর শুরু করে।’
মারধরের কারণ জানতে চাইলে ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দার বলেন, ‘আমি জানি না কী কারণে আমাকে মারধর করা হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিবের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। পরে আমি স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে মিটিং করছেন। দেখি ওনারা কী সিদ্ধান্ত নেন। সেই অপেক্ষায় আছি। তবে আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায়বিচার চাই। এর বেশি আর কোনো কথা বলতে পারব না। বলতে চাইও না। কারণ, আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের বিএমএ জেলা শাখার নির্বাচনে সহসভাপতি নির্বাচিত হন ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দার। অন্য প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল তার কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচন থেকে দুই গ্রুপে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
এদিকে ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দারকে মারধরের ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা স্বাচিপের সহসভাপতি ডা. দেবাশীষ সাহা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানে প্রচারণায় অংশ নিতে আসেন নির্বাচনের প্রার্থী স্বাচিপের মহাসচিব কামরুল হাসান মিলন। ওনার উপস্থিতিতে ডা. বিধান পোদ্দারকে মারধর করেছে ডা. সোহেল ও অলকসহ বহিরাগতরা। এতে আমাদের সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। ঘটনার পর আমরা স্বাচিপ ও বিএমএ-র কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডা. সোহেলসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও অভিযুক্ত চিকিৎসক আতিকুজ্জামান সোহেলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ডাক্তারদের মারামারির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে কী কারণে মারধরের ঘটনা ঘটেছে সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ডাক্তারদের সাংগঠনিক দ্বন্দ্বও থাকতে পারে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৬:২৭ ২০০ বার পঠিত #নারায়ণগঞ্জে #প্রকাশ্যে #স্বাচিপ