বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের ভাষাগত জটিলতা দূর করার জন্য তর্জনী ব্রাউজারটি তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এতে দেশের যেকোনো মানুষ বাংলায় সহজেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে ন্যাশনাল মোবাইল ব্রাউজার ‘তর্জনী’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশ করছি। এই স্মার্ট বাংলাদেশের সুফল পেতে হলে আমাদের শুধু বিদেশ নির্ভর সেবার ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। আমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে। আমরা এমন একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ইকোসিস্টেম’ তৈরি করতে চাই, যেটি হবে স্বাবলম্বী। সেই স্বাবলম্বী স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমরা এনেছি ‘তর্জনী’।
তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহ দিতে আইসিটি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাতে দেশীয় উদ্ভাবকদের উদ্বুদ্ধ করে নতুন নতুন উদ্ভাবন দেশের মানুষের জন্য নিয়ে আসা যায়।
ব্রাউজারটি ‘তর্জনী’ নামকরণ বিষয়ে পলক বলেন, ‘আমরা বাংলায় জাতীয় মোবাইল ব্রাউজার ‘তর্জনী’ এমন একটি দিনে অবমুক্ত করতে যাচ্ছি, যে দিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।’
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক সেই দিনে যে ‘তর্জনী’ উঁচিয়ে জাতিকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, সেই তর্জনীর নামেই আজ আমরা উন্মোচন করতে যাচ্ছি আমাদের জাতীয় ব্রাউজার।
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তর্জনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে মন্তব্য করে পলক বলেন, আমরা ‘তর্জনী’ পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করলাম। ব্রাউজারের পর আমরা আগামীতে নিজস্ব ‘অপারেটিং সিস্টেম’ আনবো। এতে আমাদের ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একটি নিরাপদ সাইবার স্পেস পাবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ আরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত করবে তর্জনী।
সাইবার দুনিয়ায় দেশের নিজস্ব সম্পদ তৈরির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুনাইদ পলক বলেন, ‘দেশের জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে চলেছে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অগ্রযাত্রা। আশা করছি আগামীতেও আপনাদের সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’
দেশের জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহারের দরজা উন্মুক্ত হওয়ার আশাও প্রকাশ করেন তিনি।
পলক বলেন, ‘বাংলা দিয়ে আমরা যেন বিশ্বের প্রযুক্তিকে প্রভাবিত করতে পারি সেজন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন, বাংলার বিশ্বায়ন, স্লোগান নিয়ে আইসিটি বিভাগ এই ১৬টি সফটওয়্যার বা টুলস তৈরি করছে। টুলসগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলা কার্পাস, বাংলা ওসিআর, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট, টেক্সট টু স্পিস, জাতীয় বাংলা কি-বোর্ড, বাংলা স্টাইল গাইড, বাংলা ফ্রন্ট, বাংলা মেশিন ট্রান্সলেটর ইত্যাদি।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) এস্টাবলিসমেন্ট অব সিকিউরড ই-মেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারের উদ্যোগে এই ব্রাউজার চালু করা হয়েছে।
‘তর্জনী’ ব্রাউজার ব্যবহারের বিষয়ে লাইভ টেকনোলজিসের পরিচালক ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘ব্রাউজারটির বৈশিষ্ট্য হলো বাংলা ভাষা ডিফল্টভাবে সিলেক্ট করা থাকে এবং এর বাংলা অপটিমাইজেশন গুগল ক্রোম বা অন্যান্য ব্রাউজারগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা সিলেক্ট করা যাবে। গুগল ক্রোম এবং বাজারের অন্যান্য ব্রাউজারগুলোর মত তর্জনী ব্রাউজারেও সব ধরনের আধুনিক ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু তর্জনী ব্রাউজার তুলনামূলকভাবে বাংলায় ব্যবহার করার জন্য অত্যন্ত সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। এতে রয়েছে তর্জনী সার্চ বার, ডার্ক মোড, ট্যাব, বিজ্ঞাপন বন্ধ, বুকমার্ক, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা, ইনকগনিটোরের মতো নানা ফিচার।’
ব্রাউজারকে ইন্টারনেটে প্রবেশের প্রথম দরজা উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘এই দরজা দিয়ে সাইবার দুনিয়ায় প্রবেশ করতে আমরা এখনও বিদেশি ব্রাউজারের ওপর নির্ভরশীল। অথচ আমাদের পাশের অনেক দেশ ডিজিটাল দুনিয়ায় স্বাবলম্বী হতে নিজস্ব ব্রাউজার চালু করেছে। গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করতে বাংলা ভাষা সহায়ক উদ্ভাবন খুব প্রয়োজন।’
জাতীয় মোবাইল ব্রাউজার ‘তর্জনী’ ব্রাউজারটি অ্যাপল এবং গুগুল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জনাব ড. বি এম মইনুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫১:৪৮ ১৭৭ বার পঠিত