মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি: করোনায় হঠাৎ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন সাগর সরকার। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এই শিক্ষার্থী ভাবছিলেন, কী করা যায়। হঠাৎ ইউটিউবে তাঁর চোখে পড়ে রঙিন মাছ চাষের ভিডিও। এ ধরনের মাছের চাষ নিজের বাড়িতেও করা যায় কি না, ভাবতে শুরু করেন। তারপর মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কিছু ‘অটো ব্রিড’ মাছ দিয়ে শুরু করেন মাছ চাষের ব্যবসা।
কিন্তু ব্যবসা শুরুর পরই দেখা দেয় বড় সংকট। মাছগুলো কোথায় বিক্রি করবেন, স্থানীয় বাজারে এসব মাছ মানুষ কিনবে কি না, এসব প্রশ্ন মাথায় আসতে থাকে। পরিচিত একজন সব শুনে মাছ কিনতে আগ্রহ দেখান। সাগর একটু একটু করে বুঝতে পারেন, স্থানীয় বাজারেও এই মাছের চাহিদা আছে। একসময় এমন হলো, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মাছ সরবরাহ করতে পারছিলেন না। তখন ঠিক করেন, ব্যবসার পরিধি আরও বড় করবেন। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি পরিবার। কেননা, বড় পরিসরে ব্যবসা করতে গেলে বেশি লাভের সুযোগ যেমন থাকে, তেমনি থাকে বড় অঙ্কের লোকসানের শঙ্কা।
কিন্তু সাগর সরকারের ছিল দৃঢ় মনোবল। পরিচিত এক আপুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা বড় করার উদ্যোগ নিলেন তিনি। কিছু কইকার্প ও কমেট মাছ নিয়ে এসে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ইউটিউব দেখে দেখে রেণু উৎপাদন করে ফেলেন। তত দিনে পরিবারও সহযোগিতা করতে শুরু করে। অতএব আরও ৪৫ শতাংশ পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এই পুকুরে উৎপাদিত মাছগুলো ৫ মাসে বিক্রি করেন। বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখেন সাগর সরকার।
এখন ৩টি পুকুর ও ১৮টি হাউস যুক্ত করে ১৫ থেকে ২০ জাতের দেড় লাখ রঙিন মাছ উৎপাদন করছেন এই তরুণ। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি যা আশপাশের বাজারের চাহিদাও মেটাচ্ছে। এসব মাছ থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে তাঁর আয় হয় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
সাগরের স্বপ্নটা আরও বড়। আশপাশের বাজারে নয়, তাঁর চাষ করা মাছ বিদেশেও রপ্তানি করতে চান তিনি। সাগর সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবছর জাপান ও থাইল্যান্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার রঙিন মাছ আমদানি করে। দেশে এসব মাছের উৎপাদন বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন আমদানি বন্ধ হবে, অন্য দিকে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ আছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৩:১৩ ১৪৯ বার পঠিত