মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি: এখন বছরজুড়েই সচল থাকে উত্তরের কৃষি। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টনের বেশি উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় উত্তরাঞ্চলে। কৃষি খাতের সব থেকে বড় অনুসঙ্গ ডিজেল। আর এই জ্বালানির চাহিদা ও জোগান সময়মতো মিললে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলে থাকবে না ডিজেলের কোনো রকম সংকট। ফলে এই অঞ্চলের কৃষি আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, কৃষির পাশাপশি এই ডিজেল ব্যবহার হবে এখানকার নতুন একটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টেও। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে শিল্পায়নেও গতি পাবে।
জমি তৈরি থেকে সেচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পড়ে ডিজেলের। তথ্য বলছে- উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রতি বছর ডিজেলচালিত সেচ পাম্প ব্যবহার হয়ে থাকে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার। এছাড়াও জমি তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে ৫০ হাজারেরও বেশি ডিজেলচালিত ছোট বড় ট্রাক্টর।
কৃষকরা বলছেন, পাইপলাইন চালু হলে চাহিদা মতো ডিজেল পেতে কোনো বেগ পেতে হবে না। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে কোনো সংকটে পড়তে হবে না।
সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী এলাকার কৃষক সামসুল হক বলেন, লোডশেডিং এবং ডিজেলের কারণে আমাদের সেচের সমস্যা হয়। আশা করি এবার আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাব।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর এলাকার কৃষক বুলবুল আহমেদ বলেন, আমাদের কৃষিকাজে সবসময় তেলটা লাগে। এই জন্য তেলটা যদি আসে তাহলে আমরা অবশ্যই উপকৃত হবো।
দুলাল হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, তেলটা আসলে আমাদের কৃষকের অনেক সুবিধা হবে। আমরা ভালো করে আবাদ করতে পারব, কোনো সমস্যা হবে না। ডিজেল সময়মতো পেলে আবাদও ভালো হবে আমরাও লাভবান হবো।
গতকাল শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের রিসিভ টার্মিনালের জ্বালানি তেল পাঠানোর এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের বিপণন টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আসতে শুরু করেছে বিপিসির পার্বতীপুরের রিসিভ টার্মিনালে।
এর আগে ২০১৮ সালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের কাজের উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ডিজেল উত্তরের ১৬ জেলার চাহিদা পূরণ করবে। পাইপ লাইন চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরের কৃষিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে কমবে খরচও।
বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, ডিজেল আমাদের একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা ছিল। এটা চালু হওয়া মাত্রই এই চ্যালেঞ্জের জায়গা থেকে আমার অনেকটা কমর্ফোট জোনে থাকব। তার মানে আমাদের কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে, এখানে যে শিল্প ব্যবস্থাপনা আছে এ ক্ষেত্রে এটি একটি বিরাট ভূমিকা পালন করবে। কৃষি ছাড়াও পার্বতীপুরের নতুন একটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টেও ব্যবহার করা হবে ভারত থেকে আনা ডিজেল। ফলে উত্তরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলে শিল্প খাতও এগিয়ে যাবে সমান গতিতে।
বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, ৫০ মেগাওয়াটের যে ডিজেল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি এখানে হবে সেটিও আমাদের পাইপলাইনের মাধ্যমে চালু হবে। এটির মাধ্যমে এ এলাকার মানুষ বিদ্যুতের সুবিধাটিও গ্রহণ করতে পাবে।
প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) টিপু সুলতান বলেন, শিলিগুড়ির নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির জন্য বিপিসির দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রিসিভ টার্মিনালটি এখন প্রস্তুত।
সংশ্লিষ্টরা সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল আনতে প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম প্রাইস পড়ে ১১ ডলার। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে খরচ পড়বে ৫ দশমিক ৫০ ডলার। অর্থাৎ প্রায় ৬ ডলারের মতো প্রিমিয়াম সাশ্রয় হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে বড় বড় জাহাজে তেল চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে আসে। সেখান থেকে ছোট ছোট জাহাজে খুলনার দৌলতপুরে আসে। তারপর ব্রডগেজ লাইনে আনা হয় পার্বতীপুর ডিপোতে। এখন সরাসরি আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে এসব ঝামেলা ছাড়াই তেল নেওয়া যাবে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই পাইপ লাইন চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরের কৃষির পাশাপাশি শিল্পখাতেও বিনিয়োগ বাড়বে।
নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি রাজ কুমার পোদ্দার বলেন, তেলটা যখন ইজিলি আসতেছে তখন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইজিলি তেল বা জ্বালানি পাবে। আমাদের শিল্প কারখানাগুলো ভালোভাবে বিদ্যুৎ পাবে। এতে করে আমাদের প্রোডাকশন বেশি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:২৫:০৮ ১৬০ বার পঠিত