একাত্তরে স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বন্ধ থেমে যায় অগ্রগতির চাকা। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে অন্ধকার যুগে টেনে নিতে চেয়েছিল দেশকে। তবে বহু বাধা পেরিয়ে আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। স্বাধীনতার পর শূন্য থেকে শুরু করা বাংলাদেশের ফিনিক্স পাখির মতো উত্থান হয়েছে সগৌরবে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা আগামীর বাংলাদেশকে কোথায় দেখতে চান, নিজেদের কাজের মাধ্যমে স্বপ্নের বাংলাদেশকে কোন অবস্থানে নিতে চান এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সময় সংবাদের সঙ্গে।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা পৌঁছাতে কাজ শুরু করে সরকার। এ ধারাবাহিকতায় আজ প্রত্যন্ত গ্রামেও মিলছে ইন্টারনেট সেবা।
প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা দিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান খান সুইট। তিনি বলেন, ‘অতীতের আফসোস কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ যেন আজ একটি সম্ভাবনার অবারিত দুয়ার। বৈশ্বিক ও ভৌগোলিক সুবিধা ব্যবহার করে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দুবাই।’
প্রযুক্তিখাতে বেশি গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে আমাদের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিতে প্রযুক্তিখাতে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। কারণ আগামীর বিশ্ব হবে প্রযুক্তি নির্ভর। এ কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মোটামুটি আমাদের সেবার মানও বাড়াতে হবে।
উদ্যোক্তা সুইটের মতে, ‘এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও ওষুধ রফতানিতে আমাদের ভালো অবস্থান রয়েছে। তবে আগামী দিনে প্রযুক্তিখাতের বিকাশ হবে। প্রযুক্তিপণ্যই হবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। দক্ষ জনবল তৈরি এবং তাদের মাধ্যমে সেবা দিয়ে আমরা আইটিখাত দখল করে নিতে পারি।’
তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু মানুষ ঘরে বসে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক হাসপাতালে, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে সেবা দিচ্ছেন। তাদের চলাফেরা কথাবার্তায় তা বোঝা যায় না। কিন্তু এরাই কোটি টাকা আয় করছেন। এমন সংখ্যা খন কম না। আমাদের এই সম্ভাবনার তরুণদের জন্য ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ গড়ে দিতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি করে দিচ্ছে। এর সুফল হয়তো আগামী কয়েক বছরেই আমরা পাব।’
তৈরি পোশাক বাংলাদেশের অন্যতম রফতানি পণ্য। ১৯৮০ সালে তৈরি পোশাক রফতানির শুরু। সস্তা শ্রমের ওপর ভিত্তি করে আজ এই খাতটি হয়ে উঠেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। এই খাতের সঠিক ব্যবহার এবং বিভিন্ন ধরনের বাধা দূর করার দাবি জানিয়েছেন তৈরি পোশাক নিয়ে কাজ করা তরুণ আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই এখন আসছে তৈরি পোশাক থেকে। এই খাতের উন্নয়নে অটোমেশন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং কাঁচামাল উৎপাদনের বিকল্প নেই। তৈরি পোশাক উৎপাদন এবং রফতানিতে অনেক ক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটা কমিয়ে আনতে হবে। রেগুলার প্রোডাক্টের পাশাপাশি ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
বিশ্ব জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং কাপড়ের ব্যবহার বিষয়ে আতিকুর রহমান আরও বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যা ৮.১ বিলিয়ন হতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারের আকার হবে ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শতাব্দির মাঝামাঝি জনসংখ্যা পৌঁছাবে ৯.৫ বিলিয়নে।’
এ অবস্থায় তৈরি পোশাকের বাজারে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে দেশের সামগ্রিক সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের ব্যবস্থা করা সম্ভব বলে মনে করেন গণমাধ্যমকর্মী সালমান তারেক শাকিল। তবে গণমাধ্যমকে গণমানুষের কণ্ঠ করতে সবার আন্তরিক সহযোগিতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
শাকিল বলেন, ‘আমরা যখন যোগাযোগহীন, বিচ্ছিন্ন, তথ্যের বাধাগ্রস্ত সময়ে ছিলাম; তখন আমাদের জানাশোনা, জ্ঞান, প্রজ্ঞার সীমানা সবই স্থিতিশীল ছিল। নতুনত্ব বলতে ছিল প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের বসবাস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে থাকার সীমানার গণ্ডি পেরিয়েছে, আমাদের দৃষ্টির সীমার বিস্তার ঘটেছে বিশ্বময়।’
তথ্যপ্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এমন সময়ে জীবনবোধে নতুন উপকরণ যুক্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন সময়ে নতুন নতুন উপকরণের ব্যবহারে আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে। তথ্যের প্রাপ্যতা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখে দেয়া সম্ভব। পরবর্তী সময়ে এসব বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হলে নিশ্চিত হবে দেশের উন্নতি।’
তবে এ জন্য অংশীজনদের আন্তরিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেনের কাছে ৫২ বছরে বাংলাদেশের পথযাত্রা এক বিস্ময়কর গল্পের মতো। বর্তমান সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে এই দেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তরুণ এ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘সাম্য, ন্যায়বিচার আর সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার গণতন্ত্রের চলার পথে হোঁচট খায়। তবে বাংলাদেশের মানুষকে থামিয়ে রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে এই দেশ এখন উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু আয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বেকারত্ব নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে।’
উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “নিম্ন আয়ের দেশ হতে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরের গল্প যেকোনো উন্নয়ন- গবেষণার একটা মাপকাঠি হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না’- ঠিক তেমনিভাবে এই দেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলতে কোনো অপশক্তি, ষড়যন্ত্র করে আটকে রাখতে পারেনি, পারবেও না।”
সরকারি কাজের মাধ্যমে জনগণকে সেবাদানের কাজে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন জহুরুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারের জনমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সরকারী নীতি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সস্পৃক্ত হতে পারাটা অত্যন্ত গর্বের।’
স্বাধীনতার ৫২ বছর উদ্যাপনের সময় সরকারি সেবাদান আরও সহজ ও জনমুখী করে দেশের জনগণকে উন্নয়নের সত্যিকারের অংশীদার করতে চান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ৪:২৯:৪৭ ১৪৯ বার পঠিত