পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উন্নয়নের মূল ধারায় নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করে, সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছেন। আজ “তথ্য প্রযু্িক্ততে নারীর অভিগম্যতা ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি” শীর্ষক এক প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এ সুপারিশ করেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “গত দেড় দশকে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়েছে। ৪৪ টি মন্ত্রণালয়ে নারীর জন্য আলাাদা বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। তা সত্বেও নানাবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে প্রদত্ত বাজেট পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই জেন্ডার বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন, নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিতকরণ ও সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার টাস্কফোর্স প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে পারে।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে বেগম সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রুমানা আলী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, বেসিস এর সাবেক সহ-সভাপতি এবং ইউ ওয়াই সিষ্টেম লিমিটেড এর সিইও ফারহানা আনোয়ারা রহমান।
আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তির সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী ও স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সুশাসন ও সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, জাতীয় বাজেট একটি অর্থনৈতিক দলিল- যা সামাজিক অগ্রগতির লক্ষ্যে তৈরি হয়। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে। তিনি সম্পদে নারীর সম-অধিকার, সম-অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
সংসদ সদস্য রুমানা আলী বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রামীণ নারীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নারী উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি নারীর অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উপর জোর দেন।
অধ্যাপক সেলিম রায়হান সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করে বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে নারী-পুরুষের সমান প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে বাজেটে নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের মত প্রকৃত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে হবে।
ফারহানা আনোয়ারা রহমান ‘নারী উদ্যোক্তা ঋণ’ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, উদ্যোক্তাদের প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করলে বাজেটে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। একসেস টু ফাইনান্সে কেন নারী পিছিয়ে যাচেছ, গবেষণা করে তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
শরমিন্দ নিলোর্মী মূল বক্তব্যে অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করে, পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসহ সবাইকে তথ্য প্রযুক্তি সেবার অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যবহারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলেও ইন্টারনেট ব্যবহারে বড় ধরণের জেন্ডার গ্যাপ আছে। ডিজিটাল অভিগম্যতা মৌলিক মানবাধিকারের একটি অংশ। আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭ তম। বর্তমানে নারীর কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণের হার ৩৬%। তিনি রেজাল্ট বেজড বাজেট মূল্যায়ণের জন্য জেন্ডার বাজেটিং টাস্কসফোর্স গঠনের সুপারিশ করেন।
মালেকা বানু বলেন, এসডিজির ৫ নং লক্ষ্য ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ তরান্বিত করার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর চাহিদা ও প্রয়োজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি নারীবান্ধব তথ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রিয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, গণসাক্ষরতা অভিযান এবং বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৫:৩৪ ১৮২ বার পঠিত