মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে ভয়াবহ সংঘাত শুরু হয়েছে। এর ফলে দেশটির হাজার হাজার বাসিন্দা প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) থাইল্যান্ডের কর্মকর্তাদের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ লড়াইয়ের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমার অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়। এর ফলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়।
থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় কারেন প্রদেশের মায়াওয়াদ্দি শহরের আশপাশের অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বর্তমানে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এই অঞ্চলটি থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং এটি কায়িন নামেও পরিচিত।
থাইল্যান্ডের তাক প্রাদেশিক কর্মকর্তারা বলেছেন, ১০টি এলাকাজুড়ে প্রায় ৩ হাজার ৯৯৮ জন লোক থাইল্যান্ডে অস্থায়ী আশ্রয়ে পালিয়ে এসেছে। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের ইংরেজি সংবাদপত্র খাওসোদ এবং বিবিসি বার্মিজ জানিয়েছে, জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সশস্ত্র যোদ্ধারা মিয়ানমারের একটি সীমান্ত রক্ষী চৌকিতে হামলার পর উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দাতব্য কর্মী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে অনেক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং এখনও কেউ কেউ সীমান্তের মিয়ানমার অংশে অপেক্ষা করছে।
আশ্রয়ের খোঁজে থাকা এসব মানুষের কাছে পর্যাপ্ত পানীয় জল নেই বলে তিনি জানান।
ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (কেএনএলএ) মতো কিছু জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার জন্য অভ্যুত্থানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তারাও যোগ দেয়।
অ্যাসিসটেন্স অ্যসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, সামরিক বাহিনী দেশটিতে প্রায় ৩ হাজার ২১২ জনকে হত্যা করেছে এবং ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাগারে আটকে রেখেছে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দেশের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে সবমিলিয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে রোহিঙ্গারা প্রায়ই ছোট নৌকায় করে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এতে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যুও হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৪:০৩ ১২৮ বার পঠিত