গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে রংপুরের অপরাজিতারা। একইসঙ্গে নারী-পুরুষের সমতা ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে সরকারের গৃহীত সকল নীতি-পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর পুলিশ কমিউনিটি সেন্টার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে মিডিয়ার সম্পৃক্তকরণ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।
সভায় প্রেসক্লাব রংপুরের সভাপতি মাহবুব রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাবিয়া বেগম, প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান মিন্টু, সংগঠক ও সাংবাদিক মেরিনা লাভলী, সাব্বির আরিফ মোস্তফা পিয়াল, জাকির হোসেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অপরাজিতা প্রকল্প সমন্বয়ক ফিরোজ মো. নূরুন-নবী যুগল।
আলোচকরা বলেন, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুচ্ছেদ ৯০ (খ) অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব ২০২০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে আজও তা করা হয়নি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলই এই শর্ত পূরণে সক্ষম হয়নি। অথচ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রসঙ্গটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল কাঠামোয় নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে অবস্থান তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সবচেয়ে বড় সূচকগুলোর একটি।
বক্তারা আরও বলেন, গত ১৪ বছরে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ১২ থেকে ১৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এখনো আমরা ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারিনি। অথচ দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে নারীদের সঠিক ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে, সরকার ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে নারীদের সঠিক ও পুরুষের সমপরিমাণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে সরাসরি নারীদের বেশি করে মনোনয়ন দিতে হবে। তবে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কেবল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয় না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীরা কতটা স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারছে, তার ওপর নারীর ক্ষমতায়ন নির্ভর করে। তাই সঠিক ক্ষমতায়নের জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর স্বাধীন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিনা বেগম, ইউপি সদস্য পেয়ারী বেগম, ইউপি সদস্য মারুফা আক্তার মিতু (তৃতীয় লিঙ্গের), নিলুফা বেগম, রুনা লায়লা, সাংবাদিক প্রদীপ কুমার গোস্বামী, জিএম জয়, বর্নালী জামান বর্ণা প্রমুখ।
তারা দাবি করেন, এখনো পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি জনপ্রতিনিধি সবখানেই নারী ও পুরুষের মধ্যে অনেক বৈষম্য বিদ্যমান রয়েছে। দেশের জনসংখ্যা ও ভোটারদের অর্ধেক নারী। এ হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ, এমনকি জাতীয় সংসদে নারী জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা শতকরা পঞ্চাশ ভাগ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ধারেকাছেও নেই। এরমধ্যে যেসব নারী জনপ্রতিনিধি রয়েছেন, তারাও সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না। তাদের যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নারীরা এ পর্যন্ত এসেছেন নিজেদের যোগ্যতায়।
এ সময় বক্তারা নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্বাচন প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ কার্যকরী করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। মতবিনিময় সভায় মহিলা ইউপি সদস্যরা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের স্বার্থে ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর অনুরোধ জানান।
সভায় অপরাজিতা প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা করেন হেলভেটাস বাংলাদেশের মনিটরিং ইভাল্যুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং এক্সপার্ট ফাতেমা মাহমুদা। এছাড়া প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অর্জন তুলে ধরেন অপরাজিতা রুনা লায়লা, অপরাজিতা রিক্তা বেগম ও অপরাজিতা আনজুমান আরা মিনি।
ডেমোক্রেসিওয়াচ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল খান ফাউন্ডেশন, প্রিপ ট্রাস্ট ও রূপান্তর। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের অর্থায়নে এবং হেলভেটাস সুইস ইন্টারকোঅপারেশনের কারিগরি ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত অপরাজিতা প্রকল্পের আওতায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রংপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়াও মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও সদর উপজেলার অপরাজিতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:১৬:৫১ ১৫৮ বার পঠিত
