নেত্রকোনার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত কেন্দুয়া উপজেলা। এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে আগাম ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। একদিকে তাপদাহ অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে কৃষকদের কষ্ট হলেও ধান কেটে মাড়াই কাজ করছেন তারা। পাশাপাশি বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সহযোগিতা করছেন। আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানান কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাল চাষ দিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান, পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোনো কিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসূমে পৌর শহরসহ উপজেলায় ১৩ ইউনিয়নে ২০ হাজার ৭ শত ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ মেট্রিক টন ধান। এ উপজেলায় বি-আর ২৮, বি-আর ২৯, হীরা , হাইব্রিড ৭৫, ৮১, ৯১, সবুজ সাথী, এসএলএইডএইচ, জাগরনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। এদিকে হঠাৎ কিছু কিছু এলাকায় বিআর ২৮, ২৯, ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও কৃষি বিভাগ খুবই তৎপর ছিল রোগবালাই আক্রান্ত থেকে ফসল রক্ষা করতে। কৃষকদের উদাসিনতায় কিছু জমি ক্ষতি হলে ও এরপরও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
মোজাফফরপুর ইউনিয়নের কৃষক রাসেল মিল্কি বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। ফলন বৃদ্ধিতে শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শসহ সহযোগিতা করেন। এ পর্যন্ত আগাম ২ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ধান ঈদের পর কাটা হবে।
তিনি আরও বলেন, সার-সেচসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ায় এ বছর তার জমিতে ফলন ভালো হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করায় প্রতি বিঘায় তিনি ২০-২২ মণ ধান পেয়েছেন।
গন্ডা ইউনিয়নের কৃষক সুলতান মিয়া জানান, এ মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করেন। তবে এ মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক ও ডিজেলসহ সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হওয়ায় আবাদে তার খরচ বেশি হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার তার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। তবে কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি আগাম জাতের ২ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যদি ধান কাটা শেষ করতে পারেন তাহলে তিনি লাভবান হবেন।
চিরাং ইউনিয়নের কৃষক মো. রেজাউল করিম বলেন, রোদ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে এ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। সময় মতো পানি, বীজ, সার পাওয়ায় ও সঠিকভাবে জমির পরিচর্যা করায় ধানের ফলন ভালো ফলন হয়। ১ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় ৭ হাজারের ওপর কৃষককে উফসী ধানের বীজ, ডিএপি সার ও এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। উপজেলার হাওর এলাকার ইউনিয়ন সমূহের কিছু বোরো ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তারপরও এবার উপজেলার সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৪:৫২ ২৪২ বার পঠিত