গ্রীষ্মের তাপদাহে তীব্র গরমের কারণে নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আর তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে চাপের মুখে পড়েছেন নার্স ও চিকিৎসকরা।
নারায়ণগঞ্জ সদরের জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গত সাতদিন ধরে একটি বেডও খালি নেই। প্রতিটি বেডেই গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি।
প্রচন্ড গরমের কারণে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। রোগী ভর্তির সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের আগের দিন থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার মারাত্বক আকার ধারণ করে।
চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত নার্স ও সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১২৫ থেকে দেড়শ’ জন রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। জরুরি বিভাগে রোগীদের ভীড়ে তিল ধারণেরও জায়গা হচ্ছে না। সেখান থেকে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর, গুরুতর রোগীদের ভর্তি করে পাঠানো হচ্ছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে।
চিকিৎসার পর রোগীর অবস্থা ভালো হলে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমানে স্যালাইন, ইনজেকশন ও ঔষধ মজুদ থাকলেও মাত্র ১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। রোগী সামলাতে নার্স ও স্টাফদের এবার ঈদের ছুটিও বাতিল করে তাদের ডিউটি দেয়া হয়েছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. গোলাম মোস্তফা জানান, হঠাৎ করে আবহাওয়ার তারতম্য ও ঈদ উপলক্ষে খাবারের পরিবর্তন হওয়ায় এতো মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সবাই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এখানে পর্যাপ্ত পরিমান ঔষধ, স্যালাইন ও ইনজেকশন মজুদ আছে। কোন রোগীকে ঢাকায় কলেরা হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন পড়েনি। এখানেই যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের এই চিকিৎসক।
নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড কতৃপক্ষ জানান, গত ১০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আড়াইহাজারেরও বেশী রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলেন, ডায়রিয়ার চাপ একটু বেশি। আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটির কারণে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়েছে। এতে খাওয়া দাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
দিনে ৭০ থেকে ১০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছে। কেউ কেউ একটু সুস্থ হয়ে চলে যাচ্ছে। পরে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের ভর্তি রাখা হচ্ছে। আর যাদের ছেড়ে দেওয়ার মতো তাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪২:৩৯ ১৯৩ বার পঠিত