আঞ্চলিক এক বৈঠকে যোগ দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতে পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের গোয়ায় পৌঁছেছেন তিনি। প্রায় এক যুগের মধ্যে প্রথম কোনও পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চিরবৈরী প্রতিবেশি ভারতে সফর করছেন তিনি।
পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বৃহস্পতিবার ভারতের স্থানীয় সময় ৩টার দিকে গোয়ায় অবতরণ করেছে। সেখানে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন, এসসিওর সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য গোয়ায় পৌঁছাতে পেরে তিনি খুশি। তিনি এসসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক সফল হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন।
আঞ্চলিক এই জোটের বৈঠকে যোগ দিলেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সম্ভাবনা নেই পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। বৃহস্পতি ও শুক্রবার গোয়াতে এসসিওভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন। এই বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও চীন, রাশিয়া এবং মধ্য-এশিয়ার আরও চারটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেবেন।
এসসিও জোটের বর্তমান চেয়ার ভারত। ফলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই বৈঠকের আয়োজক। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলনের অবকাশে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে না।
পাকিস্তান সরকারও ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে বলেছে, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এই সফর হবে পুরোপুরি এসসিও ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে। এর সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনোভাবে জড়িত নয়।
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এই সফর ভারতে মিশ্র আবেগকে আলোড়িত করেছে। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং মুসলিম জনগোষ্ঠীসহ ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রতি দমনমূলক আচরণের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে বিলাওয়ালের কঠোর মন্তব্যের কারণে মিশ্র আবেগ আলোড়িত হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারত সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে ২০১১ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার শান্তি আলোচনার জন্য ইসলামাবাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দেশটিতে সফর করেছিলেন।
সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের ভারতে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক যেরকম তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেই পটভূমিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সশরীরে ভারতে সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
গোয়ার সমুদ্রতটে বিলাওয়াল ভুট্টোর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলাতে সাহায্য করবে কি না, তা নিয়েও নানা মহলে জল্পনা চলছে। ভারতের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটারে নিজের অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
সেখানে তিনি বলেছেন, ‘ভারতের গোয়ায় যাচ্ছি আজ। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সিএফএম বৈঠকে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেব। এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত এসসিওর সনদের প্রতি পাকিস্তানের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।’
তিনি আরও বলেন, আমার এই সফরের সময় আমি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে গঠনমূলক আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। ভারতের গোয়াতে এসসিওভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন। সেখানে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার আরও চারটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা থাকছেন।
ডন বলছে, মধ্য-এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদেরও আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে ভারত। ইরান এই সংগঠনটির নতুন সদস্য এবং দেশটি প্রথমবারের মতো পূর্ণ সদস্য হিসেবে এসসিও বৈঠকে যোগ দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৬:১৮ ১৩০ বার পঠিত