সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেড সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী জমি দখল করে একটি চক্র স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা।
এসব স্থাপনায় দোকান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দিয়ে এককালিন মোটা অংক ও মাসিক হারে আড়াইলাখের ও বেশি টাকা ভাড়া হিসেবে তুলছে চক্রটি।
এদিক এসব অবৈধ স্থাপনাকে কেন্দ্র করে ঐ এলাকায় বেড়েছে সড়কে তীব্র যানজট, ছিনতাই, চুরিসহ মাদক সেবীদের আড্ডা, মাদক সেবন ও সরবরাহ। ফলে চরম ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন আদমজী ইপিজেডের কর্মজীবি লক্ষাধীক পোশাক শ্রমিক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের দক্ষিণ পাশে সড়ক ও জনপথের জায়গায় দখল করে প্রায় ২৬টির মত দোকান-পাট গড়ে তোলা হয়েছে।
এগুলো ভাড়া নিয়ে দোকানদাররা চা-সিগারেট-পান, খাবারের হোটেল, কনফেকশনারী, মটর সাইকেল গ্যারেজ, পরিবহন কাউন্টার, অকটেন-পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রি করছে। ফলে এর আশেপাশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিনিয়ত জনসমাগম লেগেই থাকছে।
কিছুদিন আগে ইপিজেড ছুটির পর অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব দোকানের সামনে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে আশেপাশের লোকজন চোরকে আটক করে মোবাইল উদ্ধার করে। পরে পুলিশ উক্ত দোকান-পাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী জমি দখল করে গড়ে উঠা বাস কাউন্টার, খাবারের হোটেলসহ সকল দোকান বন্ধ করে দেয়।
অবৈধ এসব স্থাপনায় কালাম নামে এক ব্যক্তি একাধিক পরিবহনের বাস কাউন্টার ও রেন্ট-এ কার স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। যার কারণে আদমজী-চাষাঢ়া সড়কের দুই পাশে নিয়মিত এসব পরিবহনের অবৈধ পার্কিং দেখা যায়। ফলে সড়কটিতে নিয়মিত যানজটের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। এছাড়া আশেপাশে বেড়েছে মাদক সেবন, সরবরাহ, চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলে করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব ব্যবসায়িক স্থাপনা। চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া যাওয়ার পথে সড়কের পূর্ব পাশে আদমজী ইপিজেড এর দেয়াল ঘেষে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমি দখল করে এসব দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
দখল করা জায়গায় নির্মিত এসব দোকান-ঘর সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি ও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী স্থানীয় এক নেতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জায়গায় নির্মাণ করা এসব দোকান ভাড়া দিয়েছে মোহম্মদ আলী, মিলন, ইসমাইল, সেলিম মজুমদার, সেলিম, বাবুল, ইব্রাহীম, শহিদুল্লাহ’সহ আরো বেশ কয়েকজন। তবে দোকানদারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া তোলেন মোহম্মদ আলী ও মিলন।
এ বিষয়ে মোহম্মদ আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ২০১২ সাল থেকে লিজ নিয়ে উক্ত জায়গায় মার্কেট করে ভাড়া দিয়েছি। আমাদের কাছে লিজের কাগজপত্র আছে। তবে লিজের কাগজ দেখতে চাইলে তিনি জানান, কাগজপত্র কোথায় আছে জানিনা, এগুলো খুজে দেখতে হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এত বছর ধরে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে এই দোকান নির্মাণ ও কেনা-বেচা করছে। বিগত ১০ বছর ধরে সরকারি জমি দখল করে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য ও মাসিক চাঁদা উত্তোলণ। চক্রটি নিজেদের ইচ্ছামতো ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন আবার বিক্রি করছেন।
তারা দোকানের জামানত বাবদ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ করে টাকা জামানত বাবদ নিয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, জায়গাটি বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। পূর্বে এটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ছিল। অভিযুক্তরা দাবি করছেন তাদের নামে উক্ত জায়গাটি লিজ নেওয়া।
পূর্বে জায়গাটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের থাকায় লিজের বিষয়ে আমাদের জানা নেই। তবে তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা আসেনি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৭:৫০ ২৩৩ বার পঠিত