ঢাকা,১৮ মে ২০২৩ : শুক্রবার (১৯মে) ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদাভাইয়ের ৩২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের এই দিনে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আড়িয়াল খাঁ নদীতীরবর্তী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বিখ্যাত জমিদার পরিবারে ১৯৩৪ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দাদাভাই।তাঁর পিতা নুরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও মাতা ফাতেমা বেগম। জন্মের পূর্বেই পিতা মারা যাওয়ায় মায়ের বিচক্ষন শাসনে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠেন তিনি।উল্লেখ্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর মাতা চৌধুরী ফাতেমা বেগম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোন।ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী দত্তপাড়ার টিএন একাডেমী থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করে মুন্সিগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করেন।
তিনি বিয়ে করেন খালাতো বোন ফিরোজা বেগম মায়া চৌধুরীকে।তাঁদের কোল আলো করে জন্ম নেয় সাত সন্তান।বড় ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরী,এমপি যিনি লিটন চৌধুরী নামে সমধিক পরিচিত। তিনি জাতীয় সংসদের ২১৮ মাদারীপুর-১ আসন তথা শিবচর থেকে ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং একাদশ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ(সেক্রেটারি,আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি)।ছোট ছেলে মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন,এমপি ২১৪ ফরিদপুর-৪ ভাঙ্গা,সদরপুর,চরভদ্রাসন থেকে দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে তার মামা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধা।১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন দাদাভাই।তাঁর নেতৃত্বে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা ভারত হতে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্থানের কারাগারে বন্দী,তখন তিনি মুজিব বাহিনীর কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।নানা শেখ লুৎফুর রহমান ও নানী সায়েরা খাতুন সহ শেখ পরিবারের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই বাড়িতে আশ্রয় নেন।শেখ কামাল সহ অন্যান্য অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই বাড়ি থেকেই যুদ্ধ পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন।এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ পাক বাহিনী দাদাভাইয়ের বাড়িতে দু’বার অগ্নিসংযোগ করে।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তিনি ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করেন।নারী শিক্ষার প্রসারে শিবচরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।দাদাভাই ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদে ফরিদপুর-১৩(বিলুপ্ত) আসন থেকে ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদে মাদারীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ছিলেন তিনি।তিনি একাধারে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য,মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।তাঁর কর্মজীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় তিনি খুলনায় অতিবাহিত করেন এবং সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ।প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফুটবল ভালোবাসতেন।তিনি ফুটবল খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন এবং খেলায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠা করেন খুলনা আবাহনী ক্রীড়াচক্র।এছাড়াও তিনি আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।পদ্মা নদীর উপর সেতু,ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সর্বোপরী বাংলাদেশ একদিন উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করবে এমনই স্বপ্ন দেখতেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটছে।
এই অসাধারণ প্রতিভাবান নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিবছরের মত বাদ আছর শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের নিজ বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৪:৫১ ১৪৯ বার পঠিত