কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সরকারি ও বেসরকারি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার চিন্তিত নয়।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে। সরকার তাতে সহায়তা করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা কতটা সহায়ক হবে, তা আমি জানি না।’
উন্নয়নের কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারকে জনগণ বারবার ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই ঠিক করবে কারা ক্ষমতায় যাবে। তারা যাদের ভোট দেবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে।
এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকালে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে মনে করে সরকার।
এতে বলা হয়, নিজেদের ভোট ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ অনেক বেশি সচেতন। ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার কোনো নজির এ সরকারের নেই। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকারকে রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা হিসেবে গণ্য করে। এমনকি জনগণের ভোটাধিকারের জন্য আওয়ামী লীগের নিরলস সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য জমায়েত ও সভা-সমিতির স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় সরকার।
এতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার এক কোটি ২৩ হাজার ভুয়া ভোটার করেছিল। পরবর্তীতে যাতে কেউ ভুয়া ভোটার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। ভোটারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তা ও এজেন্টদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে স্বচ্ছ ব্যালট বক্স ব্যবহারের নিয়ম করা হয়েছে।
এছাড়া পূর্ণ স্বাধীনতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় অর্থ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারই প্রথম ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এ আইন অনুসারে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ম্যান্ডেট অনুসারে নির্বাচনকালীন পুরো নির্বাহী প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকবে, যাতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে তারা দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে, বুধবার (২৩ মে) রাতে এক টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের বিষয়ে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারায় একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত থাকবে, সেসব বাংলাদেশির ভিসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর আওতায় বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় বলেও ব্লিঙ্কন উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৩:০২ ১৩০ বার পঠিত