ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের টাকার মান হারিয়েছে। আমদানীকৃত সকল পণ্যই ডলার দিয়ে কিনতে হয় বলে দাম বেড়েছে। আগে যেটা এক ডলার দিয়ে কিনলে ৮৫ টাকা পড়ত, এখন সেটা ১১০ টাকা দিয়ে আমাদের কিনতে হয়। সেটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু এমন নয় যে এটা শুধু আমাদের দেশেই বেড়েছে। আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি। করোনা পরিস্থিতির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা জানি দেশে বর্তমানে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই পেয়াজ আমদানী করা হবে। তখন পেয়াজের দাম কেজিতে ৫০ টাকার মধ্যে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তৃতীয় জাতীয় চা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত শ্রীমঙ্গলস্থ টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামের সম্মেলন কক্ষে শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ কোটি মানুষের ১ কোটি পরিবারকে রমজান মাসে সাশ্রয়ীমূল্যে নিত্যপণ্য দিয়েছি। বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে আমরা এগুলো করছি। আমাদের দেশের কিছু কিছু ব্যবসায়ীদের মধ্যে (সবাই না) অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা আছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এরমধ্যে তারা এসব সুযোগ নেয়। আমরা চেষ্টা করছি সেগুলোকে কন্ট্রোল করার।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম আমাদের দেশের পেয়াজটা যেন ৪০ থেকে ৪৫ বা ৫০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। যাতে উৎপাদনকারী কৃষকরা লাভমান হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা গবেষণা করে দেখেছি আমাদের দেশে উৎপাদিত পেয়াজ ১৮ টাকার মতো কস্টিং পড়ে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে ২৫ টাকা যদি তারা পায় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে। এরপর অন্যান্য খরচসহ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করলে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে। আমাদের দেশের চাহিদা মতো বছরে ২৫ থেকে ২৬ হাজার টন পেয়াজ উৎপাদিত হলেও এগুলো সংরক্ষণ করা যায় না বিধায় আমাদেরকে আমদানী করতে হয় ৬ থেকে ৮ লাখ টন পেয়াজ।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে এই সময়ে ভারতে পেয়াজের দাম কম থাকলেও ইমপোর্ট বন্ধ থাকায় আমরা আমদানী করতে পারছি না। এছাড়া কৃষিপণ্যের আমদানীর পারমিশন দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বারবার চিঠি দেয়া হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয় ইমপোর্টটা এলাউ করার জন্য। তারা যদি বিবেচনা করে ইমপোর্টটা খোলে দেয় তাহলে পেয়াজের দাম কমে আসবে। আমদানী করা পেয়াজের দাম তখন চলে আসবে ৫০ টাকার মধ্যে।
তিনি বলেন, এবারের ‘চা বিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড-এর উদ্যোগে ৪ জুন (রোববার) প্রথম বারের মতো শ্রীমঙ্গলে ৩য় চা দিবস বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে প্রথমবারের মত জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে।
মন্ত্রী জানান, দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয় চা। এটি সিলেটের মালনিছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চা শিল্প বিকশিত হতে থাকে। এ বছর চা শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার চা শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে চায়ের রাজধানী বলে পরিচিত শ্রীমঙ্গলে জাতীয় চা দিবসের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের চা শিল্পে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন চা কোম্পানি/ব্যক্তিকে জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। এছাড়া জাতীয় চা দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী চা মেলার আয়োজন করা হয়েছে। চা মেলাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য দিনব্যাপী চা মেলা উন্মুক্ত থাকবে
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পাশেই বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আয়োজিত চা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। এছাড়া অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইফ ড. মো: আব্দুস শহীদ এমপি উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম এনডিসি, পিএসসি প্রমুখ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৬:৪৯ ১৬৮ বার পঠিত