সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপমাত্রা। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। সেই সঙ্গে চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ এই আসে, এই যায়। লোডশেডিং যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’ একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় কষ্ট ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বয়স্ক আর শিশুরা। দেশব্যাপী চাপা অসস্থিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। উল্টো কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
কয়লা সংকটে গত ২৫ মে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার (৫ জুন) পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে কেন্দ্রটির উৎপাদন। তারপর থেকেই বেড়ে চলেছে লোডশেডিং। দিন দিন তা আরও বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তেলভিত্তিক প্ল্যান্টে ফের উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে পিডিবি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী বলেন, পায়রার ঘাটতি মেটাতে কয়েকটি তেলভিত্তিক প্ল্যান্ট চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে সামিটসহ কয়েকটি প্ল্যান্ট রয়েছে। চেষ্টা করছি পায়রা উৎপাদনে আসার আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।
এর আগে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তখন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। পরে কয়লাভিত্তিক পায়রা ও রামপাল উৎপাদনে আসায় লোডশেডিং সমস্যা দূর হয়। এবার কয়লা সংকটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হলে ফের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে তেলের চাহিদাপত্র পাঠায় পিডিবি। চলতি বছরের জুন মাসে পিডিবির তেলের চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। যা তাদেরকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে লোডশেডিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপিসির কাছে পিডিবি অতিরিক্ত তেল চেয়েছে কি না, তা বিপিসি সূত্রে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে রামপাল, পায়রাসহ মোট ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। মোট উৎপাদন সক্ষমতা (খুলনার ২২৫ ও ৩৩০ মেগাওয়াট বাদে) ২ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট। আর রামপাল ও পায়রা একত্রে উৎপাদন করে ২ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট।
এ দুটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো খুলনা, বরিশালসহ আশেপাশের অঞ্চলের চাহিদা মেটাতো। পরে তেলের অভাবে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট, মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট এবং সামিটের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ছিল।
পিজিসিবির রিপোর্টের (৫ জুন) সর্বশষে তথ্যানুসারে, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট প্লান্ট থেকে ১২০, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট থেকে ১৭, ও সামিটের ১১০ মেগাওয়াট থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৬:৫৩ ১৩৯ বার পঠিত