হিটসক ও নেক ব্লাস্টের পরও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক টন ধান অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে।
বোরো মৌসুমের মার্চের শেষে ও এপ্রিল মাসের শুরুতে বৃষ্টিপাতের কারণে নেক ব্লাস্ট, পাতাপোড়া, খোলপচা,খোল পোড়া রোগ, মাজড়া, গান্ধী, বাদামী ও গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণের আশংকা দেখা দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাফরোজা আক্তার ওই সময় পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করেন। এছাড়া বোরোধানের রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনায় সার্বক্ষণিক মাঠ পরিদর্শনের জন্য সব ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বোরাধান মাঠে অবস্থান করার নির্দেশ দেন ওই কর্মকর্তা। ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-২৯ এ নেকব্লাস্টসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এছাড়া এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে টানা তাপ প্রবাহে ধান হিট সকে পড়ে। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কৃষকরে পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তারা পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে কৃষকরা কাজ করেছেন। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল উফশী ও হাইব্রিড ধানের চাষ সম্প্রসারিত হওয়ায় গোপালগঞ্জে ধানের অতিরিক্ত ফলন পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাফরোজা আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন ধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে কৃষকরা প্রণোদনার বীজ সার পেয়ে ২০ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে। তারা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯২ হেক্টর জমিতে বেশি বোরোধানের আবাদ করেন। ইতিমধ্যেই শতভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
২০ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৪৪ মেটিক টন ধান অতিরিক্ত উৎপাদিত হয়েছে। কৃষক আমাদের পরমর্শে কাজ করেছেন তাই অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এ জন্য কৃষকদের ধন্যবাদ জানান।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ হামিদুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ৮১% জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়েছিল। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-৫০, ব্রিধান-৮৮,ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৭৪,ব্রিধান-৮৪, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষাবাদ করেন কৃষক। এ কারণে ধানের অতিরিক্ত ফলন পাওয়া গেছে। ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-২৯ জাতে নেক ব্লাস্ট ও প্রায় সব জাতের ধান হিট সকে পড়ে। তারপরও কৃষক সচেতন হওয়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কৃতিত্ব আমাদের কৃষকদের । অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করায় আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় গ্রামের আশরাফুল মিয়া (৫৫) বলেন, বোরো মৌসুমে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ হয়েছে। ক্ষেতে কিছু ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য কারা গেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে। তাদের পরামর্শে কাজ করে ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পেরেছি। শেষ পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। বাম্পার ফলন পেয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। এ জন্য কৃষি বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। ওই কৃষক আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বিনামূল্যে বীজ, সার, সেচে ভর্তুকি দিয়েছেন। তাই আল্লাহর রহমতে ধানের ভালো ফলন পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমরা ধন্য। তাঁর জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া-মোনাজাত করি। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১০:৩৫ ১২৫ বার পঠিত