তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপিকে নির্বাচনে এসে দশ শতাংশ ভোট পায় কিনা তা পরখ করে দেখার কথা বলেছেন।
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দয়া করে নির্বাচনের খেলা থেকে পালিয়ে যাবেন না। নির্বাচনে আসুন, অংশগ্রহণ করে আপনাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন, দশ শতাংশ ভোট পান কিনা সেটি পরখ করে দেখুন।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা ওয়াকওভার চাই না। আপনারা নির্বাচনী খেলায় আসুন, আমরা খেলে বিজয় লাভ করতে চাই। আওয়ামী লীগ খেলে গোল দিতে চায় কিন্তু বিএনপি চায় খেলা থেকে পালিয়ে যেতে।’
মন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজ মাঠে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও বোয়ালখালী উপজেলার প্রয়াত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল আলমের শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম ৭ আসনের সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির এখন দুই ভীতি। একটা হচ্ছে নির্বাচন, আরেকটা হচ্ছে জনগণ। সেজন্য বিএনপি মহাসচিবসহ তাদের নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিশেষ করে নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিএনপির মাথা আরো বেশি খারাপ হয়েছে। কারণ এখন বিএনপি আর নির্বাচন প্রতিহত এবং বর্জন করার কথা বলতে পারবে না, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নাকি আওয়ামী লীগ ১০ শতাংশ ভোটও পাবেনা। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন সময়ে জিয়াউর রহমান আমাদের ওপর ‘স্টিম রোলার’ চালিয়েছিল। চট্টগ্রাম শহরে বিএনপির ক্যাডারদের দা, কিরিচ আর লোহার রডসহ নামিয়ে দিয়ে মহড়া দেয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ঠিকমতো ভোট দিতে দেয়া হয়নি। সেই নির্বাচনেও আমরা ৩৩-৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছি। আসলে আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করেন তাহলে তারাই ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না।
‘বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে’ প্রশ্ন রেখে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সাড়ে তিন হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ’শ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। চার হাজারের মত গাড়ি পুড়িয়েছে এবং মানুষের সম্পত্তি জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুলিশের উপর হামলা পরিচালনা করেছে। বিএনপি এ জন্য জনগণের কাছে যেতে ভয়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এখন ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা আবার বের হয়ে জনগণের ওপর হামলা পরিচালনা করবে। তারা জানে নির্বাচনে জিতবে না, এখন চেষ্টা করবে দেশে গন্ডগোল লাগানোর। গন্ডগোল লাগিয়ে দেশে একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করবে। কিন্তু জনগণ তাদেরকে সেই সুযোগ আর দেবে না।
ড. হাছান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের সাথে অন্যদের পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও নূরুল আলমের জীবন সম্পর্কে আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই। এখন অনেকেই রেডিমেইড নেতা হতে চাই, টাকা দিয়ে রাজনীতি কিনতে চান। আওয়ামী লীগের রাজনীতি কখনো টাকার কাছে বিক্রি হয় না, হবে না এবং বিক্রি হতে দেব না। রেডিমেইড নেতা হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নয়। সেখানেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টির পার্থক্য।’
তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, অনেক প্রার্থী আসবে নানা ধরনের কথা বলবে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন- আমরা যে রাস্তাগুলো করেছি সেগুলোতে গর্ত হলে তারা ভরাট করতে পারবে কিনা ? যাদের গর্ত ভরাট করার যোগ্যতা নেই তারা নানা সমালোচনা করে, আমাদের করা রাস্তা দিয়ে ফোর-হুইল গাড়ি চালিয়ে গিয়ে বলে- কোন উন্নয়ন হয়নি। যারা এরকম বলবে তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলতে হবে আগের মত কাদা মাড়িয়ে হেঁটে যাও।’
বোয়ালখালী উপজেলার উন্নয়নে সহায়তায় সবসময় সচেষ্ট থাকার কথা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, বোয়ালখালীবাসীর অনেক প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে ভাঙ্গন রোধে ব্লক বসানো হয়েছে। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই এলাকা নিয়ে প্রয়াত মোসলেম উদ্দিন আহমদের অনেক স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, তার মধ্যে অন্যতম কালুরঘাট সেতু ইতিমধ্যে নীতিগতভাবে একনেকের প্রাথমিক স্তর অনুমোদিত হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদনও হবে। সড়ক এবং রেল দুটি মিলেই একটি সেতু হবে। এই সেতুর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলে জানান তিনি।
বোয়ালখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সহসভাপতি এস. এম. আবুল কালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৫২ ১২১ বার পঠিত