প্রথম ইনিংসেই বড় লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাই অনুমিতভাবেই বড় লক্ষ্য অপেক্ষা করছিল আফগানদের জন্য। তবে শান্ত-মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে সেটা রীতিমতো রানপাহাড় হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ফলে এই টেস্টে জয়ের জন্য আফগানিস্তানকে করতে হবে ৬৬২ রান।
১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। গতকালের দুই অপরাজিত ব্যাটার উইকেটে এসে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছেন। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পাত্তায়ই পায়নি আফগান বোলাররা।
সবালীল খেলতে থাকা দুই ব্যাটার বিপদ ডেকে আনলেন দৌড়ে ৩ রান নিতে গিয়ে। দুই রান সম্পন্ন করার পর দুটানায় পড়ে যান জাকির। আর তাতেই যেন সর্বনাশ! ৭১ রান করে জাকির সাজঘরে ফেরায় দিনের প্রথম সাফল্য পায় আফগানিস্তান।
জাকির ফিরলেও রানরেটে তার প্রভাব পড়েনি। কারণ অপর প্রান্তে থাকা শান্ত একই গতিতে রান তুলেছেন। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন তিনি। এবার দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ১১৮ বলে তিন অঙের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছিলেন। আর এবার তিনি শতক পূরণ করেছেন ১১৫ বলে।
হাশমতউল্লাহ শাহিদির অফ স্টাম্পের ওপর করা ফুলার লেন্থের বল স্কোয়ার লেগে পাঠিয়ে প্রান্ত বদল করলেন শান্ত। অপর প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই মাথার হেলমেট খুলতে থাকেন, প্রান্তে পৌঁছেই দুই হাত ওপরে তুলে শূন্যে লাফালেন! কারণ এই এক রান নিয়ে তিনি শতক পূরণ করেছেন। আর তাতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে একই টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন শান্ত। এর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমনটা করে দেখিয়েছিলেন মুমিনুল হক।
২ উইকেটে ২৫৫ রান তুলে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না শান্ত। দুর্দান্ত এক ইনিংসের সমাপ্তি ঘটলো সাদা-মাটা একও ক্যাচে। ৫৪ তম ওভারের প্রথম বলটি পায়ের ওপর ফুল লেন্থে করেছিলেন জহির খান, সেখানে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে বল গ্রাউন্ডে রাখতে পারেননি শান্ত তাতে মিডউইকেটে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫১ বলে ১২৪ রান।
মুশফিকুর রহিমের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি যে শটের নাম ঘিরে আলোচনা হয় তা রিভার্স সুইপ। সাম্প্রতিক সময়ে বহুবার এই শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস।
আগের বলেই স্লগ সুইপে ছক্কা হাকানোর পর পরের বলে জহির খানকে রিভার্স সুইপ করতে যান মুশফিক, তাতে একেবারেই টাইমিং করতে পারেননি তিনি। ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে বল উপরে উঠে যায়। খুব বেশি গতি না থাকায় দূরত্বও পায়নি। আর তাতে ৩ বল খেলে ৮ রান করে লেগ স্লিপের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক।
তিন বলের ব্যবধানে শান্ত-মুশফিক ফিরলেও আফগানরা যে বাংলাদেশকে চেপে ধরতে পেরেছে তা কিন্তু না। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকই রানের চাকা সচল রেখেছেন মুমিনুল। এই টপ অর্ডার ব্যাটারের শুরুটা ছিল নড়-বড়ে। তবে সময় যত গড়িয়েছে ততই হেসেছে তার ব্যাট! তাতে লম্বা সময় ধরে বড় ইনিংস না খেলতে পারার আক্ষেপও ঘুচেছে। ১২৪ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেছেন তিনি। প্রায় দুই বছর পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল। ম্যাচের হিসেবে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৬ ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল অপরাজিত ছিলেন ১২১ রানে। আর লিটন দাস অপরাজিত থেকেছেন ৬৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮২
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪২৫/৪ ইনিংস ঘোষণা
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৬৬২)
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১১:২২ ১৩১ বার পঠিত