২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ বিনির্মাণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর খসড়া দ্রুত অনুমোদনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নারী সদস্যরা।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন কেন জরুরি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় নারী সংসদ সদস্যরা এ দাবি জানান।
শনিবার (১৭ জুন) নারী মৈত্রী আয়োজিত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আইসিটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাছিমা বেগম-এনডিসি, সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন,বাংলাদেশ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শবনম জাহান শিলা, সংসদ সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩; অ্যারোমা দত্ত, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১১; নার্গিস রহমান, সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৫, লুৎফুন নেসা খান, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪৮, আফরোজা হক, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৫০, আদিবা আনজুম মিতা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৭, বাসন্তী চাকমা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯, সালমা চৌধুরী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৪, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১২ এবং শিরিন নাঈম পুনম, সাবেক সংসদ সদস্য। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো: সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
সভায় বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়া সত্তেও এখনও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই যুগান্তকারী ঘোষণাকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের বিভিন্ন দূর্বল দিকসমূহ চিহ্নিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি (ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) শক্তিশালী ও বিশ্বমানে উন্নীত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবং অধিকতর সংশোধনের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আলোকে প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছেন। উল্লেখ্য, যে বাংলাদেশ এফটিসিতেতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমকে প্রধান উপদেষ্টা এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩ আসনের সাংসদ শবনম জাহান শিলাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমম্বয়কারী নাসরিন আক্তার। প্রবন্ধে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর বিবেচনায় অন্যতম। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ মতে, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ বা প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়ক্ষ মানুষ (১৫ বছর বা বেশি) তামাক ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ মানুষ ধূমপান না করেও বিভিন্ন গণপরিবহন পাবলিক প্লেসে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। টোব্যাকো এটলাস ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের ফলে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) -এর অধিকতর সংশোধনের জন্য এফসিটিসি’র আলোকে একটি খসড়া প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে। যেখানে সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার কথা খসড়ায় বলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫২:০০ ১৮৫ বার পঠিত