সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তাই মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল জামাল ভূঁইয়াদের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। এ ম্যাচ হারলে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশের। এমন সমীকরণের ম্যাচে শুরুতেই পিছিয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রেখে মালদ্বীপকে উড়িয়ে দিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
রোববার (২৫ জুন) ভারতের বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তীরাভা স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি ৩-১ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ দল। হামজা মোহাম্মদের গোলে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল মালদ্বীপ। তবে বিরতির আগে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে তারিক কাজী ও মোরসালিনের গোলে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলার দামাল ছেলেরা।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। এই মঞ্চেই গাঁথা রয়েছে ফুটবলে বাংলাদেশের সোনালী প্রজন্মের ইতিহাস। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ট্রফিটি উঠিয়ে ধরেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। তবে ২০০৯ সালের পর থেকে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ।
এবার শক্তিশালী লেবাননের বিপক্ষে ২-০ গোলের হার দিয়ে সাফ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। ফলে সেই আরাধ্য সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প কোনো পথ ছিল না লাল সবুজ প্রতিনিধিদের সামনে। বাঁচা-মরার এই ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে জামাল ভূঁইয়ারা।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। তবে সেই লড়াইয়ে প্রথম সাফল্যের দেখা পায় মালদ্বীপ। ১৭ মিনিটে রক্ষণের দুর্বলতায় বামপ্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠে হামজা মোহাম্মদকে পাস দেন আলি ফাসি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার ডান পায়ের শট বামে ঝাপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো।
এরপর পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ৩৪ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ পেয়েও ভাগ্য সহায় হয়নি জামালদের। কর্নার থেকে আসা বলে প্রতিপক্ষের ডি-বক্স হেড নেন তপু বর্মন। তার হেড জালে জড়ানোর আগে মালদ্বীপের রক্ষণের কল্যাণে বল গ্লাভসবন্দি করে নেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসাইন শরীফ।
পরের মিনিটে গোলের উদ্দেশে আরও একটি শট নেয় বাংলাদেশ। তবে দুর্বল শটের কারণে সহজেই বল গ্লাভসবন্দি করে নেন মালদ্বীপের গোলকিপার শরীফ। তবে ৪২তম মিনিটে বাংলাদেশ তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা পায়। সতীর্থের ফ্রি কিক থেকে নেওয়া শটে ডি-বক্সে হেড নেন তপু বর্মণ। অরক্ষিত অবস্থায় থাকা রাকিব বাকি কাজটা অনায়াসে সারেন।
বিরতির আগে বাংলাদেশ দল আরও একবার গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। বাঁ প্রান্তে আক্রমণে উঠে গোলের উদ্দেশে জোরালো শট নেন রাকিব। তবে এ ফরোয়ার্ডের শট দারুণ প্রচেষ্টায় লাফিয়ে সেটি কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন প্রতিপক্ষের গোলকিপার শরীফ। ফলে ১-১ গোলের সমতায় প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণে ধারালো হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। যার ফলে ৬৭ মিনিটে লিডও পেয়ে যায় লাল সবুজরা। আগের ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে তারিক কাজীর ভুলেই গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ। এবার মালদ্বীপের বিপক্ষে তার গোলেই লিড পায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এতে ২-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
এরপর ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বাংলাদেশের জয়ই যেন নিশ্চিত করে শেখ মোরসালিন। ৯০ মিনিটে মালদ্বীপের ডি বক্সে দুর্দান্ত দক্ষতায় বা পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৩-১ গোলের ব্যবধানে। এরপর আর কোনো গোল না হলে দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার শিষ্যরা।
ম্যাচে ৫১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে ২০টি শট নেয় বাংলাদেশ, যার ৯টি ছিল গোলমুখে। বিপরীতে ৪৯ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে মালদ্বীপের নেয়া ৭ শটের ২টি ছিল গোলমুখে।
আগামী ২৮ জুন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভূটানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। খেলাটি সেদিন বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:৩৭:০৩ ১২৯ বার পঠিত