বাজবল দিয়ে ইংল্যান্ড যখন একে একে প্রতিপক্ষকে দুমরে মুচড়ে দিচ্ছিল তখন অনেকেই ভাবছিল, এটাই টেস্টের ভবিষ্যৎ। এমনকি এই ইংল্যান্ডকে কেউ আদৌ থামাতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন অনেক বোদ্ধা। তবে বাজবলের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা যে হবে অ্যাশেজেই সেটা নিয়ে একমত হয়েছিলেন অধিকাংশই। অ্যাশেজের প্রায় দুই টেস্ট শেষে বাজবল নিয়ে এখন ভিন্নসুর সিংহের ডেরায়। অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে নাস্তানাবুদ হচ্ছে বেন স্টোকসের দল! লর্ডসে তাদের পরাজয় ঠেকাতে ভরসা এখন ডাকেট-স্টোকস জুটি।
লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বেন ডাকেট। নইলে চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলেই এই টেস্টের সকল উত্তেজনায় পানি ঢালা হয়ে যেত। তৃতীয় দিনে ৯১ রানের লিড নিয়ে ফের ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া দিন শেষ করেছিল ২ উইকেটে ১৩০ রান নিয়ে। ইংলিশদের দিন শেষ হয়েছিল পাহাড়সম রানের নিচে চাপা পড়ার শঙ্কা নিয়ে। তবে চতুর্থ দিনে অজিরা ব্যাটিংধ্বসে ২৭৯ রানেই গুটিয়ে যায়। তাতে অবশ্য যে লক্ষটা দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের সামনে তাই বা কম কিসে! চতুর্থ ইনিংসে ৩৭০ রান তাড়া করা বড় চ্যালেঞ্জ বটে।
রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটাই হয়েছে বাজে। ৯ রানের মাথায় জ্যাক ক্রাওলির বিদায় স্টার্কের বলে। প্রথম ইনিংসের মতোই দ্বিতীয় ইনিংসেও ত্রাস ছড়াচ্ছেন স্টার্ক। পরের ওভারে ফিরে ওলে পোপকেও ফিরিয়ে দেন তিনি। তখন ইংল্যান্ডের সংগ্রহ মোটে ১৩ রান।
স্টার্কের সঙ্গে এই ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও। দলীয় ৪১ রানে ইংল্যান্ড বড় ধাক্কা খায়। কামিন্সের বলে বিদায় নেন জো রুট। ১৮ রান করেই বিদায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং মেরুদণ্ডের। একই ওভারের পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে যান হ্যারি ব্রুকও। ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন বড় হারের শঙ্কায় কাঁপছে ইংলিশরা। পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য এখনও ২৫৭ রান দরকার ইংলিশদের। হতে আছে ৬ উইকেট।
এখান থেকেই বেন ডাকেট ও ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকসের প্রতিরোধ শুরু। দুজনের অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৯ রানের জুটিতে ইংলিশরা এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
৫০ রান নিয়ে ব্যাট করছেন ডাকেট, সঙ্গী স্টোকসের সংগ্রহ ২৯। এই জুটির পেছনে অবশ্য অজিদের ফিল্ডারদের অবদানও কম নয়। তিন তিনবার পেয়েছেন জীবন।
এর আগে চতুর্থ দিনে অর্ধশতক পান উসমান খাজা। অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দিতে স্টুয়ার্ট ব্রড নেন ৪ উইকেট। তবে চতুর্থ দিনে সবচেয়ে বড় ঘটনা নাথান লায়নের ফিরে আসা। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টানা ১০০ টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়া লায়ন তৃতীয় দিন ফিল্ডিং করতে গিয়ে পেশিতে চোট পান। এরপর ফিজিওর কাঁধে ভর দিয়ে তার মাঠ ছাড়া দেখে অনেকেই ভেবে নিয়েছিল সেঞ্চুরি করেই বুঝি ছেদ পড়ছে লায়নের পথচলায়। কিন্তু এদিন অস্ট্রেলিয়ার নবম উইকেটের পতনের পর তাকে ব্যাট হাতে নামতে দেখে আশায় বুক বাধে অজিরা। তবে ম্যাচে এরপর আর বল হাতে দেখা মেলেনি তার। চোটের কারণে এই টেস্ট তো বটেই সিরিজের বাকি টেস্টেও তাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
এই টেস্টে জিততে হলে ইনিংসদের এখন দারুণ কিছুই করে দেখাতে হবে। তাড়া করতে হবে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এর আগে মাত্র একবারই এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় পেয়েছে ইংলিশরা। এই বাজবল জামানায় ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে ৩৭৮ রানের লক্ষ ইংলিশরা পাড়ি দিয়েছিল মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩:৪৭ ১১৬ বার পঠিত