দেশের কিডনি চিকিৎসায় নতুন মাইলফলক স্পর্শ করল বঙ্গবন্ধু সুপার স্পেশালাইড হাসপাতাল। চালুর এক বছর না যেতেই সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করলো প্রতিষ্ঠানটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সোমবার (১৭ জুলাই) প্রথমবার কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সুবিধা চালু থাকবে।
এছাড়া আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বাদে প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য গুনতে হবে মাত্র তিন লাখ টাকা। নতুন এ সেবার মাধ্যমে নির্ভুল চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি অনেক কমে যাবে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
ছয় মাস আগে পুরোপুরি কিডনি বিকল হয়ে যায় পিরোজপুরের বাসিন্দা সুজন রায়ের। দেশের বাইরে ছুটে যান কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। তবে খরচের অঙ্কের কাছে হার মেনে ফিরে আসেন দেশে। স্বজনদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দাতা না পেলেও এগিয়ে আসেন ছোট ভাই শুনেন রায়। নিজের মূল্যবান অঙ্গ বড় ভাইকে দান করে স্থাপন করেন দৃষ্টান্ত।
সুজন রায়ের স্বজনরা বলেন,
ভারতের চেন্নাইতে চিকিৎসা নেয়ার জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বলা হয়েছিল, ৬ মাস থেকে চিকিৎসা করতে হবে। এর জন্য খরচ হবে ১৭ লাখ টাকা। এখন মাত্র ৩ লাখ টাকায় চিকিৎসাটা নেয়া যাচ্ছে।
নতুন এ সেবা দেশের চিকিৎসা খাতে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে জানালেন প্রতিস্থাপনে অংশ নেয়া চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন,
অপারেশন থিয়েটার, পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট, পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারসহ যাবতীয় বিষয়ে উন্নত বিশ্বের সুযোগ-সুবিধাগুলোর মতোই আছে।
অধ্যাপক ডা. তৌহিদ মোহাম্মদ সাইফুল হোসেন (চিফ সার্জন অব ডোনার) বলেন, ‘এ দেশের যে রোগীরা দেশের মধ্যে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন করতে চান, তারা অবশ্যই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আসবেন।’
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন,
বিদেশে যারা যান, তাদের উদ্দেশে বলব, এ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্য অনেক দেশের চেয়ে উন্নত।
চৌদ্দ দিনের কিডনি প্রতিস্থাপন প্যাকেজে রোগীকে খরচ করতে হবে ৩ লাখ টাকা। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএসএমএমইউতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট চলছে। তবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নতুন এ সেবা চালু হওয়াকে যুগান্তকারী ঘটনা বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। কেননা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মানসম্মত উপায়ে তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের সেবা পাবেন রোগীরা।
দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে সর্বশেষ এ তথ্য জানিয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৮৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এসব রোগীর মধ্যে ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয় প্রতি বছর। এসব বিকল রোগীর ৭৫ শতাংশই মৃত্যুবরণ করে থাকে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের সুযোগের অভাবে। এছাড়াও হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে প্রতি বছর আরও ২০ হাজার রোগী মারা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৮:৫০ ১২০ বার পঠিত