বর্তমান বিশ্বে ৫০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যা নগরে বসবাস করছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো এই দ্রুত নগরায়ণের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার বুকে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ হলেও দেশটি অত্যন্ত দ্রুত হারে নগরায়ণের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) অনুসারে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশটির ৮০ ভাগ জনসংখ্যা নগরে বসবাস করবে। দ্রুত নগরায়ণের এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে রাজধানী ঢাকার ওপর।
আজ শনিবার সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত নগর দুর্যোগ ঝুঁকি ও করণীয় : প্রেক্ষিত ঢাকা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
গোলটেবিলে আলোচকরা জানান, বিবিএস ২০১১ মোতাবেক, নগরে বসবাসরত জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ঢাকায় বসবাস করছে, যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকার জনঘনত্ব ৩০০-৮০০/একর, যা নগরটিকে করে তুলেছে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, নগরের প্রায় ৭৩ শতাংশ অবকাঠামোই অপরিকল্পিত।
এ ছাড়া ইউএন-হ্যাবিট্যাটের প্রকাশনা থেকে পাওয়া গেছে, ঢাকায় পাবলিক স্পেস ও রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত জমির পরিমাণ মাত্র ১৩.৫%। এ সকল কারণ ঢাকাকে নগর দুর্যোগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বিশাল অন্তরায় হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
অনুষ্ঠানে নগরকেন্দ্রিক দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে আট দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। বিআইপির আট সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রণয়নকৃত ভূমিকম্প কন্টিনজেন্সি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা (অস্থায়ী আশ্রয়সমূহের যথাযথ চিহ্নিতকরণ ও এ বিষয়ক জনসচেতনতা বৃদ্ধি)।
দুর্যোগবিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী, ২০১৯-এ বর্ণিত যেসব সংস্থার কন্টিনজেন্সি প্ল্যান তৈরির কথা উল্লেখ রয়েছে তা অতিসত্বর প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করে জলাধারসমূহ চিহ্নিত করা, বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া। বিল্ডিং কোড প্রয়োগ সম্পর্কিত প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করা। পর্যায়ক্রমে সকল ধরনের পেশাজীবী নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা। ইলেকট্নিরক কন্সট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম কার্যকর করা।
কাঠামো নকশা, যন্ত্রকৌশল নকশা, বৈদ্যুতিক নকশা এবং প্লাম্বিং নকশা পরীক্ষা করা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
আলোচনাসভায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ। দেশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টেকনিক নিয়ে আমরা গর্বিত। তবে গত ছয় বছরে আমাদের দেশের এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এটা পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আমাদের দেশেও হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো কমিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এত দিন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এখন আরো বিস্তৃত কাজ করার সুযোগ এসেছে। মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঢাকা তো দেয়ালের রাজধানী হয়ে গেছে। আজকাল আমাদের শহর-গ্রামে একটি দেয়ালের সাথে আরেকটা দেয়াল ঘেঁষে দালান করা হচ্ছে। কেউ কেউ দালান না করলেও সীমানা দেয়াল দিচ্ছেন। নগরবাসীদের সময় এসেছে দেয়াল দেওয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসার। তা না হলে একটু ভেতরের দিকের বাড়িগুলোতে অ্যাম্বুল্যান্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও প্রবেশ করতে পারবে না। আমরাই এখন দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ হচ্ছি। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা জরুরি।’
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজউক শহরকে সঠিক উপায়ে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। ড্যাপের বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত জমিতে খোলা জায়গা বা পুকুর থাকলে সেটা বাঁচাতে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
বিআইপি’র প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৬:০৬ ১৩৪ বার পঠিত