বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাটি পৃথিবীতে চরম নিষ্ঠুরতা ও মানবতার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, এতো বড় নিষ্ঠুর, মানবতার লঙ্ঘন বিশ্বে আর হয়েছে কি না জানা নেই।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন কৃষকলীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশে হয়তো আর স্বাধীনচেতা মানুষ বা জনগণের কল্যাণ করার মতো কেউ থাকবে না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীকে নিয়ে তাদের ভয় ছিল। সেই কারণে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সব সদস্যকে নিমর্ম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের কৃপায় সেদিন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে বেচেঁ গিয়েছিলেন। পরে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে এদেশের মানুষকে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এখনো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। একাত্তরের সেই পরাজিত শক্তি এবং পঁচাত্তরের সেই ঘাতক শক্তি তারা এখনো তৎপর। তারা এখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তারাধিকারীকে ভয় পায় এবং যার কারণে তাদের ষড়যন্ত্র করছে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীকে সরিয়ে দেয়া যায়।
পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কথায় কথায় তারা মানবাধিকারের কথা বলেন, গণতন্ত্রের দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা বলেছি কাদেরকে নিয়ে আপনারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান, কাদেরকে নিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেন? যারা সন্ত্রাসী। যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, নারী নির্যাতন করেছে তারা কখনো মানবতার অধিকারী হতে পারে না। তাদেরকে নিয়ে কখনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত খুনি জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা। যে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেছিল, আইন করে বিচার বন্ধ করেছিল সেই দলকে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান? যারা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে তাদের নিয়ে মানবতার কথা বলেন, আইনের শাসনের কথা বলেন কোন হিসেবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে কানাডার ফেডারেল কোর্ট পঞ্চমবারের মতো বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, রায় দিয়েছে। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, বিদেশের আদালত যাদের সন্ত্রাসী দল হিসেবে রায় দিয়েছে তাদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান? এদেশের জনগণ বোঝে আপনাদের (পশ্চিমা দেশ) উদ্দেশ্য কী? আপনাদের লক্ষ্য কী? এই দেশের জনগণ বুঝতে পেরেছে, আপনাদের লক্ষ্য এই দেশ যাতে চিরকাল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে। আপনাদের লক্ষ্য এই দেশ যেন কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। আর সেজন্য বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনাদের ঈর্ষা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এই বাঙালি কখনো স্বাধীন রাষ্ট্র পেতো না, কখনো স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো না। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছর নিজের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। পরে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এবং তার নেতৃত্বেই আমরা নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, পৃথিবীতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য অনেক জায়গায় অনেক ক্যু হয়েছে। অনেক সময় অনেক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নিহত হয়েছেন। কিন্তু এভাবে নারী, শিশুসহ পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেনি, এমন দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় পঁচাত্তরের নির্মম, নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ছিল একাত্তর সালের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, এবং সেটাই নিয়েছে।
হানিফ বলেন, কৃষক লীগের সমাবেশ এই থেকে গোটা জাতিকে আহ্বান জানাবো, আমরা কোন ষড়যন্ত্র আর এই বাংলাদেশে বাস্তবায়ন হতে দেব না। এটা ‘৭৫ নয়, এটা ২০২৩ সাল। ২০২৩ সালে সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:২৮ ১৪৫ বার পঠিত