নিজস্ব সংবাদদাতা : মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা, এসএসসির কৃতি শিক্ষার্থী ও এইচএসসি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরন ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয় ।
বুধবার (৯ আগস্ট ) জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা, এসএসসির কৃতি শিক্ষার্থী ও এইচএসসি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরন ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয় ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সন্মানিত সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন,
আগস্ট মাস বাঙালি জাতির শোকের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়।এই আগস্ট মাসে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতাও ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি এই স্বাধীন বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণার বিষবাষ্প। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা উদ্যোগ নেয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত নাকলেও সে পর্দার আড়াল থেকে এই হত্যা কান্ড পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন। সে সময় শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। আনোয়ার হোসেন আরো বলেন বঙ্গবন্ধু কে হত্যা করার পর নারায়ণগঞ্জে আমার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাতে প্রথম মিছিল হয়। প্রতিবাদ করার মত আর কাউকে খুঁজে পাই নাই। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরও ছয় খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার স্থপতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের পথও সুগম হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হতে থাকে। দিনটিকে সরকারি ছুটির দিনও ঘোষণা করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে এ ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন বাতিল করে দেয়। পরে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় থেকে সফলভাবে দেশ পরিচালনা করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যের শেষের দিকে এসএসসি পরিক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আনোয়ার হোসেন বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন সোনার দেশ গরতে হলে সোনার মানুষ চাই আর তোমরাই হলে সোনার মানুষ শিক্ষার কোন বিকল্প নাই আমি চাই তোমরা প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজেদের শিক্ষাজীবন সফলতার সাথে শেষ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তোমরা যদি নিজেদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারো তাহলে আমি মনে করি আজকের এই আয়োজন সফল হয়েছে সার্থক হয়েছে। আমি প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আলহাজ্ব এস এম আহসান হাবিব, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন জনি, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য জানে আলম জানু, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য কমল সরকার, মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য হাজেরা আক্তার, সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০২:৫৬ ২৪২ বার পঠিত #নারায়ণগঞ্জ সদর