নাটোরের পক্ষাঘাতগ্রস্ত জুয়েল নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ প্রধান। এই সংগঠনের অনুসারীরা মনে করেন, আগামী দিনে জিহাদে নেতৃত্ব দেবেন জুয়েল ওরফে মাহমুদ। ইমাম মাহাদীর আবির্ভাবের আগে তিনিই দেবেন নেতৃত্ব। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলছে, সব সম্পত্তি বিক্রি করে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছিল অনেক পরিবার।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার গোপন আস্তানায় সম্প্রতি সিটিটিসির দফায় দফায় অভিযান আর ৩৯ জঙ্গি আটক হওয়ার পর আলোচনায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলা। পাহাড় ঘিরে গড়ে ওঠা এই জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান জুয়েল মাহমুদ। বাড়ি নাটোরে।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত হলেও এই জুয়েল মাহমুদই জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান। ১৫ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, ইমাম মাহাদীর অগ্রবর্তী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের আমির জুয়েল। তারা মনে করেন, ইমাম মাহাদীর আবির্ভাবের আগে যে দুর্বল প্রকৃতির ব্যক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হচ্ছে, তিনিই হলেন তাদের আমির। যার প্রকৃত নাম জুয়েল। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনিও শারীরিকভাবে দুর্বল। এই চিন্তাভাবনা অনুসারীদের মনোজগতে কৌশলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অনুসারীরা এটাও বিশ্বাস করেন, আগামী দিনে জিহাদে নেতৃত্ব দেবেন জুয়েল ওরফে মাহমুদ।
সিটিটিসির ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ওই সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্য জিহাদ করা। সংগঠনটির আহ্বান ছিল, জিহাদ করতে হবে। জিহাদের পূর্বশর্ত হচ্ছে হিজরত করা। হিজরত করে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়া এবং সময় সুযোগ বুঝে অনুকূল পরিবেশ পেলে বা সক্ষমতা তৈরি করতে পারলে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে।
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কয়েকটি পরিবার তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে হিজরত করেছে। সমস্ত টাকা পয়সা দান করেছে সংগঠনে।’
সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলছেন সিটিটিসির ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
বিশ্লেষকরা বলছেন, জিহাদের অপব্যাখা দিয়ে অল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত নয়, দলে ভেড়ানো হচ্ছে অত্যন্ত মেধাবীদেরকেও।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘একটা সময় আমরা জানতাম যে শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই এ ধরনের সংগঠনে জড়ায়। কিন্তু এখন দেখছি, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেও এ ধরনের জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। এখানে ডাক্তার, প্রকৌশলী এমনকি সাবেক সামরিক কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়ছেন। ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তারা মনে করছেন যে এই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বেহেশত পাওয়া যাবে।’
নতুন জঙ্গি সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে যারা কথিত হিজরতে জন্য ঘর ছেড়েছেন এমন আরও কয়েকটি পরিবারে নজরদারিতে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১০:৪৩ ১১২ বার পঠিত